শিক্ষার্থীরা যাঁরা বিদেশে পড়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের তালিকায় প্রথম দিকেই থাকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের নাম। এর নানা কারণও আছে। কিন্তু এই তিনটি দেশে কমতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। শিক্ষাসংক্রান্ত পোর্টালগুলো এ কথা জানিয়েছে। কেন কমেছে, সেই ব্যাখ্যা করেছে তারা। শিক্ষাসংক্রান্ত পোর্টালগুলোর লিঙ্কডইনের শেয়ার করা তথ্য থেকে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপিয়েছে ইকোনমিকস টাইমস।
স্টাডি পোর্টালগুলো সম্প্রতি লিঙ্কডইনে যেসব গবেষণা প্রতিবেদন ও তথ্য শেয়ার করেছে, তাতে ইঙ্গিত মিলছে যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (অন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) বিবেচনা করছে। এর অন্যতম কারণটি হলো এসব দেশের অভিবাসন নীতিমালা। অভিবাসন নীতিমালা এ জন্য দায়ী। এ কারণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার প্রতি কম ঝুঁকছেন শিক্ষার্থীরা অথবা বলা যেতে পারে, তাঁদের কাছে কম আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
শিক্ষা পোর্টালগুলোর গবেষণার শিরোনাম ছিল—‘জয়ী ও পরাজিত: যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ নীতিগুলো কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করেছে’। অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের পর থেকে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কয়েকটি গন্তব্য কীভাবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের চেয়ে এগিয়ে গেছে, গবেষণায় তা–ও দেখানো হয়েছে। প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে অন-ক্যাম্পাস ব্যাচেলর ও মাস্টার প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছরের জানুয়ারিতে তরতর করে বাড়ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এই শিক্ষার্থী বাড়ার প্রবণতা কমেছে, বিশেষ করে কানাডায় এটা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। মার্চে কিছুটা স্থিতিশীলতার লক্ষণ ছিল, পরে আবার কমতে শুরু করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সামগ্রিক প্রবণতা ছিল নিম্নগামী, অর্থাৎ কমতির দিকে।
এই সময়, অর্থাৎ এ বছরের জুলাই পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আর্ন্তজাতিক শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বা জনপ্রিয়তা যুক্তরাজ্য বা কানাডার তুলনায় অনেক কম ছিল। ট্রেন্ডলাইনেও এমন ইঙ্গিতই মিলেছে। ২০২৪ সালে প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এ বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২৫ দশমিক ১ শতাংশ ও কানাডায় ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হ্রাস পেয়েছে।
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, এটা নানা তথ্যে প্রমাণিত। যাহোক, শিক্ষা পোর্টালগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ে ভোটের ফলাফলকে (কনজারভেটিদের হারিয়ে ক্ষমতায় লেবার পার্টি) ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশাবাদ লক্ষ করা গেছে।
যুক্তরাজ্যর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রশাসনের কারণে যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের যাওয়া কমেছিল। কারণ, সে সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্ভরশীলদের (স্ত্রী/স্বামী) থাকার অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। কনজারভেটিদের সময়ে গ্র্যাজুয়েট রুটে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছিল। এ সুবিধার ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দুই থেকে তিন বছরের কাজের অধিকার হারাতে বসেছিলেন। বিদেশি শিক্ষার্থী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা স্টেকহোল্ডাররা এখন আশায় আছেন যে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রশাসন এ ক্ষেত্রে নতুন নীতি গ্রহণ করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শীর্ষ পাঁচ দেশের শিক্ষার্থী ধারাবাহিকভাবে কমেছে। পাঁচটি দেশের মধ্যে, বিশেষ করে ভারত (২৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে) এবং ইরান (১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে) থেকে কমেছে বেশি।
যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রেও অবস্থা একই রকমের। নাইজেরিয়া থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে, প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র (৩২ দশমিক ৪) ও পাকিস্তানের ( ৯ দশমিক ৭ শতাংশ) থেকেও কমেছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতি পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা গত বছরের তুলনায় কম আগ্রহ দেখিয়েছেন। নাটকীয়ভাবে কমেছে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের শিক্ষার্থী। যদিও একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে (৩০ দশমিক ৫ শতাংশ)। আগ্রহ বেড়েছে ভারতেরও। বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা কম চাহিদা ভারতের (১০ দশমিক ৭ শতাংশ)।