ফলাফল প্রকাশের পর ‘বৈষম্যহীনভাবে’ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দাবিতে একদল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ-অবরোধের মুখে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। গতকাল রোববার রাতের সেই ঘোষণা অনুযায়ী আজ সোমবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করার জন্য আবেদনপত্র দিয়েছেন।
জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার আবেদনপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল এসএসসি পরীক্ষার সব বিষয়ের ফলাফল বিবেচনায় (বিষয় ‘ম্যাপিং) নিয়ে ‘বৈষম্যহীনভাবে’ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে বিক্ষোভ–অবরোধ করেন। দিনভর অবরোধের মুখে রাতে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তপন কুমার সরকার।
এ বছরের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। বাকি ছিল ব্যবহারিক পরীক্ষাও। একপর্যায়ে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থীরা। তখন স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ।
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)।
অর্থাৎ এসএসসিতে যে শিক্ষার্থী যত নম্বর পেয়েছিলেন, সেটা এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এ দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, ইতিমধ্যে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ জন্য তাঁদের দাবি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সব বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল নতুন করে প্রকাশ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল দুপুরের দিকে ‘এইচএসসি ব্যাচ ২০২৪’-এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে যান। তাঁদের মধ্যে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া কিছুসংখ্যক কৃতকার্য শিক্ষার্থীও ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একপর্যায়ে ফটকের তালা ভেঙে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। পরে ভবনের ভেতরেও ঢুকে পড়েন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বোর্ডের ভেতরে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা এ হামলার বিচার চান।
অন্যদিকে বোর্ডের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে ও কক্ষের সামনেও ভাঙচুর চালান। গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে চেয়ারম্যানের দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার পড়ে আছে। কাগজপত্রসহ ফাইল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। এদিকে শিক্ষা বোর্ডে ভাঙচুরের ঘটনায় বোর্ডের কর্মচারীদের আজ শিক্ষা বোর্ডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।