ভারতের জেএনইউতে প্রতিবাদে নিষেধাজ্ঞা, করলে জরিমানা-বহিষ্কার

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)

ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) একাডেমিক ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হলে বা মানববন্ধনের জন্য কেউ দাঁড়ালে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত জরিমানা বা বহিষ্কার করা হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক নির্দেশনায় এমনটি জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের তালিকায় রয়েছে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, চেয়ারপারসন, ডিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারীদের অফিস। এর আগে হাইকোর্টের এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্লকের ১০০ মিটারের মধ্যে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই ১০০ মিটারের মধ্যে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরদের অফিস রয়েছে।

এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ প্রক্টর অফিসের (সিপিও) নির্দেশ অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে এবং যেখানে ক্লাস পরিচালনা করা হয়, সেখানে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে।

জেএনইউর স্কুল অব ল্যাঙ্গুয়েজ ভবনের দেয়ালে গত অক্টোবরে একটি ‘ভারতীয় জাতীয়তাবিরোধী’ স্লোগান লেখার পর থেকেই ক্যাম্পাসে মতপ্রকাশে নানা বাধা ও নিষেধাজ্ঞা আসছে। নতুন এই নির্দেশ তারই অংশ। অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

নতুন নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে বিদায় অনুষ্ঠান, নবীনবরণসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিলে ছয় হাজার ভারতীয় রুপি জরিমানা করা হবে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো আবাসিক ভবনের আশপাশেও কোনো ধরনের সভা–সমাবেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আর কোনো ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায়ের প্রতি উসকানি ও ‘দেশবিরোধী’ কার্যকলাপের জন্য ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হবে।

নতুন এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সংগঠনগুলোর ভাষ্য, এমন নিয়ম ক্যাম্পাসে ভিন্নমতকে দমন করার একটি প্রচেষ্টা। জেএনইউ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জেএনইউএসইউ) নতুন নিয়মের বিরোধিতা করে বলেছে, এটি ক্যাম্পাসে ভিন্নমতকে দমন করার একটি প্রচেষ্টা এবং অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি করেছে।

গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৈঠকে কার্যনির্বাহী পরিষদ ‘নতুন নিয়মের’ নির্দেশিকার অনুমোদন দেয়। নতুন এই নিয়মের অধীন উপাচার্য সন্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়ম বা আচার-আচরণ লঙ্ঘনের কাজকে শাস্তিযোগ্য বলে গণ্য করার ক্ষমতা থাকবে। উপযুক্ত মনে করলে শাস্তি মওকুফ, পরিবর্তন বা বহাল রাখার ক্ষমতাও থাকবে তাদের।

সিপিও অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে অনশন, ধর্মঘটসহ যেকোনো ধরনের প্রতিবাদে জড়িত থাকলে বা কোনো ফটক অবরুদ্ধ করলে তাঁকে ২০ হাজার রুপি জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি দুই মাসের জন্য হোস্টেল থেকে বহিষ্কার বা দুই মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে। অবস্থান ও ঘেরাও কর্মসূচিসহ যেকোনো কর্মকাণ্ড, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে বা সহিংসতা উসকে দেয়, এমন কোনো কাজে জড়িত ব্যক্তিদেরও শাস্তি দেওয়া হবে।