আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি সামনে রেখে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে
আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি সামনে রেখে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে

গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়, ভর্তিতে আবারও বাড়বে ভোগান্তি

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং খরচ কমাতে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতেন।

কিন্তু আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি সামনে রেখে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই পথ অনুসরণ করতে চায় আরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে আবারও পুরোনো ভোগান্তি ফেরার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আবারও ছুটতে হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়বে।

ইতিমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ও স্বকীয়তার কথা বললেও বাস্তবে আর্থিকভাবে বিপুল লাভের কারণেই মূলত আলাদা পরীক্ষা নিতে চায়। কারণ, ভর্তির ফরম বিক্রি বাবদ বিপুল আয়ের বড় অঙ্কই শিক্ষকসহ ভর্তির কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পেয়ে থাকেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আসন্ন শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যবস্থা অনুসরণ করতে উপাচার্যদের অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদাভাবে পরীক্ষা হলে ভোগান্তি-ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি তাঁদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটবে। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদাভাবে পরীক্ষা হলে ভোগান্তি-ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি তাঁদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটবে। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

বর্তমানে সারা দেশে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১৪টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এ ছাড়া ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজে উচ্চশিক্ষায় পড়ানো হয়।

একসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিত। তখন ভোগান্তি ও অর্থের অপচয় ছিল নিত্যসঙ্গী। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি হয় কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এ ছাড়া দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছিল।

ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়। তবে গুচ্ছে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমাতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রায় তিন দশক ধরে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে একই ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। ফলে মেডিকেলে পরীক্ষা নিয়ে কোনো দুর্ভোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চলতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম প্রথম আলোকে বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষ মত আছে। তবে বেশির ভাগই পক্ষে। যদি কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে, তাহলে সেটা সমাধান করা হয়। শনিবারের সভায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

যে চার বিশ্ববিদ্যালয় বের হলো

একসময় সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষকদের চাপ ছিল গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। এবার তারা বেরিয়েই গেল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে ফরম বিক্রির কাজও শেষ করেছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার প্রাথমিকভাবে মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। প্রাথমিক আবেদন ফি নেওয়া হয় শিক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা। শুধু প্রাথমিক আবেদন ফি হিসেবেই প্রায় ২ কোটি টাকা আয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখন চলছে চূড়ান্ত আবেদন পর্ব। চূড়ান্ত আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ৭০০ টাকা ফি দিতে হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রতি ইউনিটে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষ মত আছে। তবে বেশির ভাগই পক্ষে।
অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম, উপাচার্য, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আছে, ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল (শিক্ষা পরিষদ)। সেই কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাঁরা এবার ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও একসময় সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিত। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ও এবার আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা ভর্তির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শনিবারের সভার পর তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শনিবারের সভার পর তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।