কানাডায় ফল সেশনে পড়তে আসার প্রস্তুতির ধারাবাহিকতায় আজ ছাপা হচ্ছে আপনার লাগেজে কী কী নিয়ে আসবেন।
আগে যেমন প্রায় সব ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে দুটি লাগেজ ও একটি হ্যান্ডব্যাগ বহন করা যেত। ইদানীং বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা এ নিয়ম পরিবর্তন করেছে। তারা দুটির বদলে একটি লাগেজ ব্যাগের অনুমতি দিচ্ছে। টিকিট কাটার সময় দেখে নেবেন আপনার টিকিটে কয়টি ব্যাগের অনুমতি আছে। সে অনুযায়ী আপনার লাগেজে কী কী থাকবে, তার পরিকল্পনা করবেন। তবে আপনার অতিরিক্ত ব্যাগের প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত টাকা ঢাকা বিমানবন্দরে দিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারবেন। ওই টাকা আপনাকে ঢাকার বিমানবন্দরে দিতে হবে। একটি অতিরিক্ত লাগেজের জন্য প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
সাধারণত প্রতিটি লাগেজে ২৩ কেজি ও হ্যান্ডবাগে ৮ কেজি বহন করতে পারবেন। প্রতিটি এয়ারওয়েজের আলাদা লাগেজ ও হ্যান্ডব্যাগের সাইজ থাকতে পারে; তাই ব্যাগ কেনা ও মাল ঢোকানোর আগে সাইজ নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ব্যাগটি কেনার আগে সেটি যেন হালকা হয়, সে বিষয়টি মাথায় রাখবেন। কারণ, ব্যাগের ওজন যত কম হবে, আপনি তত মালামাল বেশি নিতে পারবেন। যাঁরা ল্যাপটপ আনবেন সেটি হ্যান্ডব্যাগে আনবেন। সেটি বিমানের লাগেজে দেবেন না। প্রত্যেকটি বিমানবন্দরে নিরাপত্তাতল্লাশির সময় ল্যাপটপটি দেখাবেন।
আপনি যে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেন, সেটি নিয়ে আসবেন। যদি নতুন ফোন কিনতে চান, তাহলে কানাডা থেকে কেনা ভালো। কারণ, এখানে যখন কানাডিয়ান সিম কার্ড কিনবেন, তখন প্রতি মাসে ফোন বিলের সঙ্গে ১৫-২০ ডলার অতিরিক্ত দিলে একটি নতুন আইফোন পাবেন; তবে তার জন্য আপনাকে ওই কোম্পানির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তিতে যেতে হবে। আইফোন ছাড়া স্যামসাং ব্যবহার করতে চাইলে মাসে অতিরিক্ত পাঁচ ডলার দিলেই নতুন ফোন পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশের স্মার্টফোনের চার্জারগুলো কানাডার কোনো জায়গায় আলাদা প্লাগ ছাড়া চার্জ দেওয়া যায় না; ফলে ঢাকা থেকে সেই প্লাগ কিনে আনবেন। তবে এই প্লাগ কানাডাতেও কিনতে পারবেন।
টি–শার্ট, প্যান্ট, ফরমাল শার্ট, হালকা জ্যাকেট বাংলাদেশ থেকে কিনে আনলে ভালো হবে। এগুলোর দাম কানাডায় ৩–৪ গুণ বেশি। তবে শীতের মোটা জ্যাকেট ও স্নো-বুট কানাডা থেকে কেনা ভালো।
আপনি যদি চশমা পরেন, তাহলে অতিরিক্ত কয়েকটি চশমা নিয়ে আসবেন। চোখের ও দাঁতের যদি কোনো সমস্যা থাকে, চিকিৎসক দেখিয়ে আসবেন। কানাডায় চোখ-দাঁতের চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রে আপনার ইনস্যুরেন্সে কাভার করবে না। সাধারণ মানের একটি চশমার দাম ১৫০ ডলারের বেশি পড়বে।
বই, খাতা, কলম না আনলেও হবে। কানাডার ইউনিভার্সিটির এবং শহরের লাইব্রেরিগুলো খুবই উন্নত মানের। খাতা কলমের দামও বাংলাদেশের মতো।
ট্র্যাডিশনাল জামাকাপড় যেমন লুঙ্গি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, গামছা, ধুতি, টুপি, জায়নামাজ, সালোয়ার-কামিজ—এগুলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এলে আপনার খরচ অনেক কম পড়বে। ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ঈদ, পয়লা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস খুব ঘটা করে পালন করা হয়। এই উৎসবগুলোর জন্য আলাদা জামা আনতে পারেন। নিজের ঘুমানোর বালিশ, কম্বল, কাঁথা ও চাদর আনতে পারেন। কারণ, এগুলো আপনার প্রথম রাতেই লাগবে। তবে লাগেজের ওজন বেশি হলে না–ও আনতে পারেন। কারণ, এগুলোর দাম কানাডা ও বাংলাদেশে প্রায় সমান।
এখানে আপনাকে রান্না করে খেতে হবে। হাঁড়ি-পাতিল বাংলাদেশ থেকে না এনে এখান থেকে কিনলে ভালো হবে। কেউ যদি বঁটি আনতে চান, তাহলে অবশ্যই হ্যান্ডব্যাগে না এনে লাগেজে আনবেন। কানাডার সব শহরে বঁটি কিনতে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের যে জিনিস স্বাভাবিক কিন্তু কানাডায় তা নিয়ে আসা নিষিদ্ধ। এই জিনিসগুলো ওয়েবসাইট দেখে নেবেন। মোটাদাগে বলতে গেলে সুপারি, জর্দা, কাঠের তৈরি জিনিস, রান্না মাছ, মাংস, দুধের তৈরি যেকোনো কিছু আনবেন না। কানাডায় কী কী আনতে পারবেন না, তা কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেখে নেবেন।
স্বপ্নের কানাডায় শুরুটা হোক আপনার আনন্দময়। জানি, শঙ্কা-ভীতি অনেক কিছুই কাজ করছে। তবে সরকারি ও সামাজিক নিয়মকানুন মেনে চললে কানাডায় আপনার শুরুটা হবে নির্ঝঞ্ঝাট। চলবে...
*আগামী পর্ব: আপনার যে অ-প্রথাগত দক্ষতাগুলো থাকতে হবে