সুইডেন শ্রেণিকক্ষে কেন কম্পিউটার স্ক্রিন নিষিদ্ধ করছে

ছবি: এএফপি

সুইডেন শিক্ষা খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে। দেশটির নার্সারি শ্রেণিতেও ট্যাবলেটে পাঠদান চলে। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে দেশটি। কারণ, প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিশুদের মৌলিক দক্ষতা ও জ্ঞান বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। খবর ওয়ার্ল্ড ক্রাঞ্চে

সুইডেনের স্কুলবিষয়ক মন্ত্রী লট্টা এডহম। তিনি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতির বড় সমালোচক। গত মার্চে তিনি বলেছেন, সুইডেনের শিক্ষার্থীদের আরও বেশি বেশি বই দরকার। ডিজিটাল কপি নয়, ছাপানো বই শেখার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার।

সুইডেনের শিক্ষকেরা শিশুশিক্ষার্থীদের ছাপানো বই পড়া, হাতের লেখা চর্চার প্রতি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। টাইপিংয়ের বদলে উৎসাহ দিচ্ছেন খাতা-কলমের অনুশীলনে।

এরপর গত মাসে মন্ত্রী এডহম জানান, জাতীয় শিক্ষা সংস্থা প্রি-স্কুল পর্যায়ে ডিজিটাল ডিভাইস বাধ্যতামূলক করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা বাতিল করতে চায় সরকার। এ পদক্ষেপ আরও সম্প্রসারিত করে ছয় বছরের কম বয়সী সব শিশুর জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এদিকে গত মাস থেকেই সুইডেনের শিক্ষকেরা শিশুশিক্ষার্থীদের ছাপানো বই পড়া, হাতের লেখা চর্চার প্রতি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। শ্রেণিকক্ষে ট্যাবলেট কম সময় ব্যবহার করতেও উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁরা। টাইপিংয়ের বদলে উৎসাহ দিচ্ছেন খাতা-কলমের অনুশীলনে।

কেন এমন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ইভালুয়েশন অব এডুকেশনাল অ্যাচিভমেন্ট (আইইএ) বৈশ্বিক শিক্ষার মান যাচাইয়ে নিয়মিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর নাম প্রোগ্রেস ইন ইন্টারন্যাশনাল রিডিং লিটারেসি স্টাডি (বা পিআইআরএলএস)।
পিআইআরএলএসে সম্প্রতি এক গবেষণা বলেছে, সুইডেনের শিশুদের পড়া বুঝতে পারার দক্ষতা উচ্চ থেকে মাঝারি পর্যায়ে নেমে গেছে। এটা খুব খারাপ অবস্থা না হলেও সুইডেনের শিক্ষার উচ্চ মানের বিচারে এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়।

৩৮টি উন্নত দেশের আন্তসরকার সংস্থা ওইসিডির পিসা টেস্টে শিক্ষার মান যাচাই করা হয়। এতে শুধু শিক্ষার্থীদের পড়া বোঝার ক্ষমতা নয়, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিতের দক্ষতাও যাচাই করা হয়। ২০১৩ সাল থেকেই সুইডেন ও এর আশপাশে প্রতিবেশী দেশগুলোর পিসা টেস্টের ফলাফলে মান অবনতি হচ্ছে।

২০১৬ সালে সুইডেনের চতুর্থ গ্রেডের শিক্ষার্থীরা গড়ে ৫৫৫ পয়েন্ট স্কোর করেছিল, ২০২১ সালে সেটা কমে এসেছে ৫৪৪ পয়েন্টে। এতে সার্বিক স্কোরে দেশটি তাইওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে সপ্তম অবস্থানে নেমে আসে। এ র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা সিঙ্গাপুরের পিআইআরএলএস রিডিং স্কোর ৫৭৬ থেকে বেড়ে ৫৮৭-তে উন্নীত হয়েছে।