বেশির ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থীর পরিবারকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ কার্যকর করেছে ব্রিটিশ সরকার। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দেশটিতে বৈধ এবং অবৈধ—উভয় অভিবাসন হ্রাস করার জন্য তাঁর নিজের দলের সদস্যদের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন।
স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাস থেকে শিক্ষাক্রম শুরু করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাঁর ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে পারবেন না। তবে স্নাতকোত্তর গবেষণা কোর্স করা বা সরকারের অনুদানের বৃত্তি পেয়ে কোর্স করা শিক্ষার্থী তাঁর ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে পারবেন।
‘ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধে’ সরকারের জোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত বছরের মে মাসে এ পরিবর্তনের কথা প্রথম ঘোষণা করে দেশটির সরকার। সুনাকের মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেছেন, এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের যুক্তরাজ্যে আসা কমবে।
২০২২ সালে সারা বিশ্বের আবেদনকারীদের জন্য ৪ লাখ ৮৬ হাজার শিক্ষার্থী ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা) দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার। ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলদের জন্য ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার, ২০১৯ সালে ছিল ১৬ হাজার। এই কয়েক বছরে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের জন্য ভিসা ইস্যুর পরিমাণ বেড়েছে আট গুণ।
এদিকে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছোট নৌকায় করে অবৈধভাবে ২৯ হাজার ৪৩৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে গেছেন। আগের বছরের তুলনায় তা প্রায় ৩৬ শতাংশ কম। যুক্তরাজ্য সরকারের সাময়িক হিসাবে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে রেকর্ড ৪৫ হাজার ৭৭৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর ছোট নৌকায় করে ইংল্যান্ডের দক্ষিণের সমুদ্রসৈকতগুলোয় যাওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হয়েছিল। তাঁরা বিপজ্জনক যাত্রার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শিপিং লেন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিল। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শীর্ষ পাঁচটি অগ্রাধিকারের একটি হলো নৌকায় করে তাঁর দেশে অবৈধ অভিবাসীর স্রোত থামানো।
অবৈধভাবে যাঁরা যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন, তাঁদের আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু পরিকল্পনাটি আটকে দেন যুক্তরাজ্যের আদালত। এখন পরিকল্পনাটি পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছেন সুনাক। যুক্তরাজ্য বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের পেছনে বছরে তিন বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ ব্যয় করছে। এর মধ্যে আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের হোটেল খরচসহ অন্যান্য ব্যয় রয়েছে। ২০২৩ সালে ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করেছে যুক্তরাজ্য। গত বছর আবেদন মঞ্জুরের হার ছিল ৬৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালের চেয়ে কম। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক আবেদন জমে আছে।