জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক (অনার্স) কোর্স চালু করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে একের পর এক পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে দুই পক্ষই। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে এই কোর্সে ভর্তিসহ এ–সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।
এর আগে প্রথমে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ইউজিসি। তখন ইউজিসি বলছিল, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বিধায় ইউজিসি এই নির্দেশ দিয়েছে। তবে এর পরদিনই ইউজিসির নির্দেশের জবাব দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ইউজিসির পত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আংশিক ও খণ্ডিত। তাদের ভাষ্য, মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ।
এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর আবার চিঠিতে ইউজিসি জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে বক্তব্য দিয়েছে, তা ইউজিসির বিবেচনায় সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। তারা আরও বলে, ইউজিসির সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ পরিপন্থী মনে হলে ইউজিসির আদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারে।
এই চিঠির পরদিনই (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাল্টা চিঠিতে ইউজিসিকে জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আজ ইউজিসির তৃতীয় দফায় দেওয়া চিঠিতে বিভিন্ন আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্স পরিচালনার বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধির অনুচ্ছেদ ৭–এর পরিপন্থী। তাই কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তিসহ এ–সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় আড়াই হাজার কলেজে উচ্চশিক্ষা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮০টি কলেজে স্নাতক চালু রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক, অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণে ও ব্যবসায়িক মানসিকতা থেকে বিভিন্ন কলেজে ঢালাওভাবে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারছে না কলেজগুলো। অবশ্য নতুন করে আর কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) কোর্সের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না।