আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) এবার দুটি ব্রোঞ্জপদক ও চারটি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা। গণিতের ৬৫তম বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ দল দলীয়ভাবে মোট ৮৩ নম্বর পেয়ে ৬৫তম স্থান অধিকার করেছে। চলতি বছর এই আয়োজনে ১০৮টি দেশের মোট ৬০৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৮১ জন মেয়ে।
২১ জুলাই স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্যের বাথ শহরে ৯০ বছরের পুরোনো ‘দ্য ফোরাম’ হলে সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মনামী জামান (২০ নম্বর) এবং ঢাকা কলেজের এস এম এ নাহিয়ান (১৭ নম্বর)। এ ছাড়া সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জিতেন্দ্র বড়ুয়া (১৫ নম্বর), বরিশাল ক্যাডেট কলেজের মুসাহিদ আহমদ (১২ নম্বর), মো. বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের নাফিজ নূর তাস্বীন (১০) এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের তাহসিন খান (৯ নম্বর) পেয়েছেন।
ব্রোঞ্জপদক পাওয়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মনামী জামান বলেন, ‘আমি এ বছর প্রথম আইএমওতে অংশগ্রহণ করি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে আমি খুব আনন্দিত। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফল করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারব।’
ব্রোঞ্জপদক পাওয়া ঢাকা কলেজ এস এম এ নাহিয়ান বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। তবে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করাতে খুশি।’
এই ফলের জন্য খুদে গণিতবিদদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি শিক্ষার্থীদের আরও ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের কথা বলেন।
এ বছর দলীয়ভাবে ২৫২ নম্বরের মধ্যে ১৯২ নম্বর এবং পাঁচটি সোনার পদক ও একটি রৌপ্যপদক নিয়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯০ নম্বর ও একই সংখ্যক পদক নিয়ে চীন দ্বিতীয়, ১৬৮ নম্বর পেয়ে দুটি সোনা ও চারটি রৌপ্য পদক নিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ১৬৭ নম্বর পেয়ে চারটি সোনা, দুটি রৌপ্যপদক ও একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি নিয়ে চতুর্থ হয়েছে ভারত।
এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ৭০তম, পাকিস্তান ৭৫তম, মিয়ানমার ৮৯তম, নেপাল ৯০তম স্থান এবং ভুটান ১০৩তম স্থান অধিকার করেছে।
প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের জ্যামিতি, কম্বিনেটরিক্স, নাম্বার থিউরি ও বীজগণিতের মোট ছয়টি সমাধান করতে হয় দুই দিনে। প্রতিদিন তিনটি সমাধানের জন্য সাড়ে চার ঘণ্টা করে মোট ৯ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। প্রতিটি দেশ থেকে প্রাক্–বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন প্রতিযোগী অংশ নিতে পারেন।
এবারেরসহ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ১টি সোনা, ৭টি রুপা, ৩৭টি ব্রোঞ্জ ও ৪৪টি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৫ জুলাই উদ্বোধনী পর্বের মাধ্যমে শুরু হয় ৬৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড এবং ২১ জুলাই সমাপনীর মাধ্যমে শেষ হয়েছে এবারের আয়োজন।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজনের মাধ্যমে ৬৫তম আইএমওর জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।