চ্যাটজিপিটি নিয়ে বিশ্বে একধরনের উন্মাদনা চলছে। প্রতিদিনের আলোচনায় একবার হলে উঠে আসে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও চ্যাটজিপিটির নাম। দিন দিন বাড়ছে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার। মুহূর্তেই উত্তর দিতে পারছে যেকোনো প্রশ্নের। চটজলদি সিভি তৈরি থেকে কবিতা, গল্প লিখে দিচ্ছে এ প্রযুক্তি। যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা গুগলে সার্চ করি, সেগুলোরই আরও সহজ ও তথ্যসমৃদ্ধ উত্তর দিয়ে দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি।
বর্তমানে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়ির কাজ শেষ করতে, অ্যাসাইনমেন্ট করতে এবং পরীক্ষার জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছে। এ কারণে, ভারতে অনেক পাবলিক স্কুল এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। গত বছর পর্যন্ত আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিলেবাসে এআই অন্তর্ভুক্ত না করা এবং চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তা নিয়ে নানা বিতর্ক চলেছে। এবার দেশটির শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে উৎসাহিত করছেন। সিএনএনের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যাটজিপিটির সেরা ব্যবহারে কীভাবে করা যায়, তা–ই বলছেন মার্কিন শিক্ষাবিদেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন এবং শেখাচ্ছেন কীভাবে এসব সরঞ্জামের সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে হয়।
রোড আইল্যান্ডভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনবাউন্ডের প্রশাসক ল্যান্স ইটন সিএনএনকে বলেছেন, ‘আগে আমরা স্প্রিং সেমিস্টারে এআই নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়া দেখেছি। কিন্তু এখন আলোচনা হচ্ছে এটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পড়া ও শেখার জন্য কীভাবে সহজ ও বোধগম্য করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, তাঁরা এখন এআইভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেছেন।
ল্যান্স ইটন বলেন, ‘এতে শিক্ষাবিদদের দেখতে সাহায্য করেছে যে অন্যরা কীভাবে শ্রেণিকক্ষে এআইয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এআইয়ের ব্যবহার এখনো অনেক ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর বোধ হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা এখন দেখতে পারছেন কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কোর্সে এর ব্যবহার করা হচ্ছে, এর পরিসর বাড়ছে। কোডিং থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞান পর্যন্ত এটি করা হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধ্যাপকেরা এখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার উপেক্ষা বা নিরুৎসাহিত করতে ভয় পান। তাঁরা বলছেন, এটিও বলছেন না যে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর হবে।
ইন্টেলিজেন্ট ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট সম্প্রতি একটি সমীক্ষা জরিপ চালিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, এই গত শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩০ শতাংশ কলেজছাত্র চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছে শিক্ষাসংক্রান্ত নানা কাজের জন্য। এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ইংরেজি ক্লাসে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এর ফলে প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের জিপিএ বেড়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে এটি (চ্যাটজিপিটি) তাদের ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
সমীক্ষা জরিপে আরও বলা হয়েছে, কলেজে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পেয়েছে। প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনেরও বেশি এটি অন্য শিক্ষার্থীদেরও ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।
ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক জুলস হোয়াইট সিএনএনকে বলেছেন, ‘এটিকে (চ্যাটজিপিটি) এখন আর উপেক্ষা করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ছাত্র, অনুষদ সদস্য এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিটি শিল্প যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করার জন্য এর কম বিকল্পই আছে। এখন প্রয়োজন আমাদের সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান।’ কিছু স্কুল এআই কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে সম্পর্কে অনুষদ সদস্য ও শিক্ষার্থী উভয়কেই শেখানোর জন্য বাইরের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করছে।