আরও পাঁচ উপাচার্যের পদত্যাগ, অব্যাহতি চেয়েছেন একজন

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রোববার তিনি ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন এবং জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.কামরুল আলম খান পদত্যাগ করেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। রোববার আবু তাহের উপাচার্যের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। আজ সোমবার সকাল আটটায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ।

কে এম নূর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ ছাড়া সব হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।’

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অফিস আদেশ অনুযায়ী গত বছরের ২০ আগস্ট থেকে চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছি। অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় কমিশনের চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাঁদের পদত্যাগপত্র পাঠান।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী গতকাল তাঁর পদত্যাগপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। পদত্যাগ করার বিষয়টি গতকাল তিনি নিজেই জানিয়েছেন। উপাচার্য ছাড়াও গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইদুর রহমানসহ পাঁচ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও চারজন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন।

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল পদত্যাগ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন। গতকাল তিনি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি পাঠান।

পদত্যাগপত্রে এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বর্তমানে আমি আমার ব্যক্তিগত কারণে উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগের জন্য আপনার কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করলাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক, এই কামনা করছি।’

পদত্যাগ করার বিষয়ে জানতে উপাচার্য আবদুল মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী।

জাহাঙ্গীরনগরের সহ-উপাচার্যের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম, শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ তাজউদ্দীন সিকদার, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ সুকল্যাণ কুণ্ডু পদত্যাগ করেছেন।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (রুটিন দায়িত্ব) এ বি এম আজিজুর রহমান বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তাঁরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সহ-উপাচার্য ও চারজন প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সবাই পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছেন।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় মদদদাতা শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া চত্বর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য পদত্যাগ করেন। এর আগে গত কয়েক দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেন।