এক শ্রেণির অসাধু চক্র ও কতিপয় বিপথগামী শিক্ষক কোচিংয়ের নামে ব্যবসা করছে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপ্রধান রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছেন
ছবি: বাসস

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে সবাইকে কোচিং ব্যবসা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলারও তাগিদ দেন। এক শ্রেণির অসাধু চক্র ও কতিপয় বিপথগামী শিক্ষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোচিং সেন্টারের নামে রমরমা ব্যবসা করছে। রাষ্ট্রপ্রধান আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জালিয়াতি থেকেও উত্তরণ ঘটাতে সরকার, মন্ত্রণালয়, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিক্ষাদান পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখুক।’

ছেলেমেয়েদের প্রতিভা বিকাশের পথ দেখাতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেষ্ট হওয়ারও পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছেলেমেয়েদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং জিপিএ-৫ পেয়েও মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করতে না পারারও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের সমাজব্যবস্থায় এখনো শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা অন্য যেকোনো পেশার তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বে। কিন্তু এই সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে কিছুসংখ্যক বিপথগামী শিক্ষকের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে না। তিনি সম্মাননাপ্রাপ্ত সব গুণী শিক্ষককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শিক্ষকেরা আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক এবং উন্নত জীবনবোধ ও নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন নাগরিক তৈরির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অবদান রেখে যাবেন।

শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সমাজ গঠনে ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে আপনাদের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য। আপনারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ন্যায়-অন্যায়, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বোঝাবেন, মানবসেবা ও দেশপ্রেম এবং পিতা–মাতার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার শিক্ষা প্রদান করবেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পিতা-মাতাতুল্য আচরণ করবেন। শাসন করবেন, কিন্তু শাস্তি নয়।’

রাষ্ট্রপ্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল, আনুষঙ্গিক ভাতা, পদোন্নতিসহ যেকোনো অসংগতি থাকলে তা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ইউনেসকো ঢাকা অফিসের প্রতিনিধি সুসান ভাইজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাফিফা জামান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, ঢাকা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক ইসমত আরা মমতাজ ও খিলগাঁও শান্তিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পল্লব কুমার ভৌমিক।

‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’—এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে বিশ্বের সব শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’।

এই দিনে বিশ্বের সব শিক্ষককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি। অনুষ্ঠানে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩’–এর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে সাতজন কৃতী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়।