বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে উচ্চশিক্ষার নানা সুযোগ রয়েছে। দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ শারজার আল-কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেয় বৃত্তি। নানা সুযোগ-সুবিধার মধ্য বৃত্তিতে বাড়িভাড়া, খাবার এবং ভিসার খরচ বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বৃত্তির জন্য কিছু শর্তও দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। আল-কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিষয় পড়ানো হয় আরবি ভাষায়। তাই বৃত্তি পেতে আরবি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে। তবে আরবি না জানালেও সমস্যা নেই। শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা শিক্ষাকেন্দ্রে এক বছর মেয়াদি কোর্সে পড়তে হবে। এর মধ্য দিয়ে আরবি ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে বিদেশি শিক্ষার্থী। গালফ নিউজের খবরে এসব কথা বলা হয়েছে।
আল-কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিটি শুধু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। এ জন্য বয়স হতে হবে ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া পরীক্ষায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে।
১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ওয়াইস আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আরবি ভাষার ওপর কোর্স করছেন। তিনি গালফ নিউজকে জানিয়েছেন, ভাষা শিক্ষার কোর্স শেষে ব্যাচেলর অব আর্টসের ওপর উচ্চশিক্ষা নেবেন।
কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি, বই কেনার খরচ, খাবার, বাসস্থান, হোস্টেলের খরচ এবং মাসিক ভাতা দেয় শিক্ষার্থীদের। আরবি ভাষার কোর্স করার সময়ে শিক্ষার্থীরা ভাতা হিসেবে পাবেন ১ হাজার দিরহাম। মূল কোর্স শুরু হলে দেড় হাজার দিরহাম ভাতা। কোর্স মেয়াদের ৫০ শতাংশ শেষ হলে বাড়িতে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা পান উড়োজাহাজের টিকিট। কোর্স শেষেও মেলে উড়োজাহাজের টিকিটওয়াইস আহমেদ, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যাচেলর অব আর্টস ইন মিডিয়া
ব্যাচেলর অব আর্টস ইন ইকোনমিকস
ব্যাচেলর অব আর্টস ইন আরবি ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার
ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন দ্য হোলি কোরআন
ব্যাচেলর অব আর্টস ইন শরিয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ
ওয়াইস আহমেদ বলেছেন, ‘আমি নিজ শহরে হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করেছি। এরপর অনলাইনে স্কলারশিপ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির সময় দেখতে পাই আল-কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ দেয়। অনলাইনে আবেদন করে ফেলি। আবেদনের জন্য দরকার পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, চারিত্রিক সনদ এবং শারীরিক সুস্থতার সনদ। এ ছাড়া হাইস্কুল পরীক্ষায় নম্বর ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ থাকতে হবে। আইইএলটিসে স্কোরও থাকতে হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যাঁরা বৃত্তি পেতে আগ্রহী, তাঁদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে বিষয়টিও আবেদনের সময় উল্লেখ করতে হবে। এটি অনেক সহায়ক বলে মনে হয়েছে।’
ওয়াইস আহমেদ আরও বলেছেন, ‘কাশিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সব খরচ বহন করবে। টিউশন ফি, বই কেনার খরচ, খাবার, বাসস্থান, হোস্টেলের খরচ এবং মাসিক ভাতা। আরবি ভাষার কোর্স করার সময়ে শিক্ষার্থীরা ভাতা হিসেবে পাবেন ১ হাজার দিরহাম। এরপর মূল কোর্স শুরু হলে দেড় হাজার দিরহাম ভাতা মিলবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কোর্স এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামেও অংশ নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কোর্স মেয়াদের ৫০ শতাংশ শেষ হলে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা পাবেন উড়োজাহাজের টিকিট। এরপর কোর্স শেষে আবারও দেওয়া হবে উড়োজাহাজের টিকিট।’
প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে আবেদন করা যায় বৃত্তির জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে করতে হবে আবেদন। আবেদন করতে কী কী করতে হকে, সে নির্দেশনা আছে ওয়েবসাইটে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সব তথ্য ওয়েবসাইটেই মিলবে।
ওয়াইস আহমেদ বলেছেন, ‘এ বছর আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। তবে আগামী বছর আবার আগ্রহী শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পাবেন। খুব সহজেই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন শেষে যাচাই-বাছাই শেষে জানানো হবে আপনাকে প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের জন্য বাছাই করা হয়েছে কি না।’
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (হাইস্কুল) মূল সার্টিফিকেট।
দশম, একাদশ ও দ্বাদশের মূল ট্রান্সক্রিপ্ট।
একটি প্রত্যয়িত অনুবাদ কোম্পানি থেকে সনদগুলো আরবি বা ইংরেজিতে অনুবাদ এবং নিজে দেশের শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয়ন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদ।
ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় হলে পাসপোর্টের ভাষা আরবিতে অনুবাদ।
ইংরেজিতে দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস, টোয়েফল অথবা ইএমএসএটি (আমিরেটস টেস্ট)।
পাসপোর্টের ফটোকপি। এ ক্ষেত্রে পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে কমপক্ষে দুই বছর।
সাদা পটভূমিতে ১২টি সাম্প্রতিক রঙিন ছবি।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। এটি অবশ্যই আরবি বা ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে।
জন্মসনদ।
দেশের সরকারি হাসপাতালের জারি করা স্বাস্থ্যসনদ বা ফিটনেস সনদ। সনদটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িত করতে হবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার তারিখ থেকে তিন মাসের বেশি পুরোনো হওয়া উচিত নয়।