নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের বেশির ভাগ কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গাইড বই বিক্রি করেন তাঁরা এসবের সঙ্গে জড়িত। দুঃখজনক হলেও সত্য কোনো কোনো শিক্ষকও এর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী এবং বিশ্বাস করি সময়মতো বই দিতে পারব ইনশা আল্লাহ।’ গতকাল শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে নতুন শিক্ষাক্রমের সংস্কার ও বাতিলের দাবি এবং সময়মতো বই প্রকাশ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বছরের শুরুতে বই পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমে দুই রকম হেডলাইন দেখেছি। একটি গণমাধ্যম বলছে, পয়লা জানুয়ারিতে বই দেওয়া যাবে কোনো শঙ্কা নেই। অপর গণমাধ্যমটি বলেছে, পয়লা জানুয়ারিতে বই দেওয়া নিয়ে শঙ্কা। কিসের ওপর ভিত্তি করে এ সংবাদ প্রকাশ করছে এবং কেন করছে আমি জানি না।’
দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম একেবারে রূপান্তর। আপনারা-আমরা কিন্তু একটি মুখস্থ বিদ্যার জগৎ পার করে এসেছি। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, তখন একটি নতুন প্রযুক্তি এসেছে ১০-১৫ বছর বিরতিতে। এখন ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা যে জগতে বড় হবে, সেখানে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে নেতৃত্বের জায়গায় টিকে থাকতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কি সারা জীবন পিছিয়ে থাকব? নিশ্চয়ই না।’ তিনি বলেন, ‘এখন পৃথিবীতে মূল জিনিস হচ্ছে দক্ষতা। সে কারণে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম রূপান্তর। এখন বিশ্বের অনেক দেশ এটি করেছে। বাকি দেশগুলো করার চেষ্টা করছে।’
দীপু মনি বলেন, ‘আমরা একটি খুব ভালো জায়গায় নিজেদের নিয়ে আসতে পেরেছি, এটি হুট করে হয়নি। ২০১৭-১৮ সালে অনেকগুলো গবেষণার পর ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত হয়ে আজকে আমরা এ অবস্থায় এসেছি। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। একটি দীর্ঘ সময় নিয়ে, অসংখ্য বিশেষজ্ঞদের কাজের মধ্য দিয়ে আমরা এ জায়গায় এসেছি এবং এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। সুতরাং এটি নিয়ে যাঁরা আজকে তথাকথিত আন্দোলন করছেন, তাঁদের বেশির ভাগ কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যাঁরা একেবারে স্কুল পর্যায় গিয়ে কমিশনে গাইড বই বিক্রি করেন, তাঁরা এসবের সঙ্গে জড়িত এবং দুঃখজনক হলেও সত্য কোনো কোনো শিক্ষকও এর সঙ্গে জড়িত।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা (আন্দোলন যাঁরা করছেন) অনেক অভিভাবককেও বিভ্রান্ত করছেন। এত বড় রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা একটি বছর পার করে এসেছি। এটি কম সময় নয়। আমাদের অভিভাবকেরা অভ্যস্ত হবেন, শিক্ষকেরা ক্রমাগত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন এবং প্রশিক্ষণ চলবে। কাজেই আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং বাস্তবায়ন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বইগুলো এখনো বলছি পরীক্ষামূলক সংস্করণ। আমরা ক্রমাগত এর পরিমার্জন ও পরিশীলন করব। কিন্তু এ পদ্ধতির পরিবর্তন হবে না। বইগুলো আরও উন্নত করা হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ এস এম মোসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বেপারী, সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সুমনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।