মান নিয়ে প্রশ্ন, তবু নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১১। গত সপ্তাহেও নতুন একটির অনুমোদন দেওয়া হয়। আবেদন রয়েছে আরও।

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। বিপরীতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কমছে।

  • ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই।

  • ৯টিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে ইউজিসি।

  • ‘ভালো করছে’ ২০ থেকে ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রায় সাত বছর আগে রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। কিন্তু গত সোমবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি। একই দশা ২০১৮ সালের এপ্রিলে অনুমোদন পাওয়া রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট নামে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করেছে, সেগুলোর বেশ কয়েকটি নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। এ কারণে কয়েক দিন আগে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে ৮টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, মানসম্মত শিক্ষার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তা নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এমন অবস্থার মধ্যে সরকার নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছে। সর্বশেষ ১১ এপ্রিল রংপুরে ‘তিস্তা ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম আল-আমিন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি রংপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও যুক্ত।

সব মিলিয়ে এখন দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়েছে ১১১টিতে। আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছু পুরোনো আবেদনপত্র এখনো জমা আছে। গত চার-পাঁচ মাসে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনপত্র জমা পড়েছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সক্ষমতা না বাড়িয়ে এবং প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সঠিকভাবে যাচাই না করে নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ায় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত উচ্চশিক্ষা দিতে পারছে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতি তদারকি করা এবং চাহিদার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হওয়া দরকার। নইলে একসময় কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়াবে, যার লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও মনে করেন, উচ্চশিক্ষার প্রসার হওয়া উচিত সক্ষমতা অনুযায়ী। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা না থাকলে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আর গুণগত শিক্ষা ছাড়া উচ্চশিক্ষা দরকার নেই বলেও তিনি মনে করেন।

দেশে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১১ (জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ)। তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের একাংশ বিদেশে চলে যেত। এই প্রেক্ষাপটে তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য আইন করে ১৯৯২ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। বিগত তিন দশকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ১১১টি। কিন্তু সেই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৪। শুরুতে গ্রহণযোগ্য ও শিক্ষানুরাগী উদ্যোক্তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১২ সালের পর অনুমোদন পাওয়া ২০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের অনেকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

৯টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সতর্কতা

ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৯ মার্চ দেশের ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে। এর মধ্যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ ক্যাম্পাস ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেমন ইবাইস ইউনিভার্সিটির অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং আচার্য ও রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, ভর্তি, পরীক্ষা, ফল এবং একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিকে চালুর জন্য সাময়িক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম হলো, এরপর শর্ত পূরণ করে স্থায়ী অনুমোদন নিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি তা পারেনি। ইউজিসি বলছে, এখন আইনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ইবাইসের মতোই বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষও নেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। একই অবস্থা দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার।

ইউজিসি বলছে, কুমিল্লায় অবস্থিত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল থেকে আচার্যের নিয়োগ করা উপাচার্য নেই। আর সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই প্রতিষ্ঠালগ্ন (২০১২) থেকেই। শিক্ষাসহায়ক ক্যাম্পাসও নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির। আবার শিক্ষাক্রমও মেয়াদ উত্তীর্ণ। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি।

ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটি নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় গত জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি। আর ঢাকার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব ও আদালতে মামলা চলছে।

উপাচার্য নেই ৩১ বিশ্ববিদ্যালয়ে

বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০২। এর মধ্যে ৩১টিতে উপাচার্য নেই। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্জিত ডিগ্রির মূল সনদে স্বাক্ষর করতে হয় আচার্যের নিয়োগ করা উপাচার্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে। যেখানে নিয়মিত উপাচার্য নেই, সেখানে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৭০টিতে সহ–উপাচার্য নেই। আর কোষাধ্যক্ষ নেই ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ তিনটি পদই শূন্য থাকে। যেমন ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে প্রতি পদে তিনজনের নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। সেটা যাচাই–বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয় প্রতি পদে একজনকে নিয়োগের জন্য। রাষ্ট্রপতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।

জানতে চাইলে দি পিপলস ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আবুবকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় তাঁরা উপাচার্য পদে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠাতে পারছেন না। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ–উপাচার্যের পদ নেই। কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তাঁরা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।

ইউজিসির কর্মকর্তা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগে দেরি হয় দুটি কারণে। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড উপাচার্য নিয়োগে তিনজনের নাম পাঠাতে দেরি করে এবং পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালায়। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় নাম প্রস্তাবের পরও সরকার নিয়োগ দিতে দেরি করে।

জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার দেশের উন্নতি চায় বলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছে। সমস্যা হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য ও দক্ষ জনবলের অভাবে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ কঠিন হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নত হবে তখন, যখন এর মূল কারিগর গুণগত মানের হবেন। দক্ষ উপাচার্য না হলে সেটা কেমনে হবে।

ঢাকায় বেশি

বর্তমানে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮টিই ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগ ঢাকা শহরের ভেতরে অবস্থিত। বাকিগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে বিভাগে ১৬টি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি, খুলনা বিভাগে ৬টি, সিলেট বিভাগে ৫টি, বরিশাল বিভাগে ৩টি, রংপুর বিভাগে ২টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অর্থাৎ ময়মনসিংহ বিভাগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে কম। অপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক উদ্যোক্তা শিক্ষা নয়, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে তাঁরা বড় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় করতে চান। এ জন্যই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এলাকাভেদে ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না।

কোনো কোনো এলাকায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাচ্ছে ইউজিসি। যেমন গত মাসেই রাজশাহীতে প্রস্তাবিত ‘ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না দেওয়ার সুপারিশ করা হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

ব্যয় বেশি, মান কম

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার খরচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের তুলনায় অনেক বেশি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় বেশি হলেও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শর্তগুলো ঠিকমতো মানে না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম কাজ হলো গবেষণা করা। কিন্তু ইউজিসির সর্বশেষ (২০২১) তথ্য বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্তত ২৫টি গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি। কিছুসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বেশি করে।

ইউজিসির কর্মকর্তাদের কারও কারও মূল্যায়ন হলো, দেশে বড়জোর ২০ থেকে ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে। অনেকগুলোর শিক্ষার মানের অবস্থা খারাপ, অনেকগুলো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। গত বছর ইউজিসি ১০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের তথ্য পায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমছে। ইউজিসির হিসাব বলছে, ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজারের কিছু বেশি। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৯৫টি। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় বেড়ে হয় ১০৮টি। শিক্ষার্থী কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ১০ হাজারে। শিক্ষকও কমেছে। ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকসংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ২০। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৩৯৩ জনে।

‘সংখ্যা বাড়ালেই হয় না’

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন এমনিতেই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে। কিন্তু গুণগত মানে তেমন নজর নেই। গুণগত মানের বিষয়টি যেন গণ্যই করা হচ্ছে না। তাই নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজন আদৌ আছে কি না, সেটা ইউজিসি সূক্ষ্মভাবে বিচার করতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং কলেজে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা গেলে বেশি ভালো হবে।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও বিচার-বিশ্লেষণ দরকার। মূল কথা হলো, সংখ্যা শুধু বাড়ালেই হয় না, গুণগত মানটিও নিশ্চিত করতে হবে।