সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

৫২ মাস ধরে বেতন না পেয়ে আন্দোলনে ৭৩৮ শিক্ষক

দেশের বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ পাওয়া ৭৩৮ জন শিক্ষক বেতনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ দাবিতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গত রোববার থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা।

আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে ৭৩৮ জন শিক্ষক ৫২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো ঘাটতি নেই। জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা
আজিজ তাহের খান, মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই ধাপে সরকার ‘স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এসটিইপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে সরকার দুই ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। ২০১৯ সালের জুন মাসে সেই মেয়াদ শেষ হয়। ওই বছরের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই কারিগরি শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়া জন্য লিখিত নির্দেশনা দেয়।

শিক্ষকেরা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের অধীনে নিয়োগ করা শিক্ষকদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে সম্মতি দেন। পাশাপাশি এসব শিক্ষকের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বেতন সরকার থোক বরাদ্দ থেকে দেওয়া ও তাঁদের রাজস্ব খাতের প্রক্রিয়াধীন শিক্ষক হিসেবে অভিহিত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এসব শিক্ষককে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে বন্ধ হয়ে যায় তাদের বেতন-ভাতাও।

চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মনিরুজ্জামান তুষার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ২০২০ সালের জুন মাসে সর্বশেষ বেতন পেয়েছেন। এরপর ৫২ মাস ধরে বেতন না পেয়ে ৭৩৮ জন শিক্ষক পরিবার-পরিজন নিয়ে কঠিন সময় পার করছেন।

শিক্ষকেরা বলছেন, বেতনের দাবিতে এর আগেও তাঁরা কর্মসূচি পালন করেছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। বেতন দ্রুত ছাড় করার আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি তুলে নেন শিক্ষকেরা। বেতন ছাড় না হওয়ায় ২০২৩ সালের মে মাসে তাঁরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সেবারও অতি দ্রুত বেতন ছাড় করার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকদের কর্মস্থলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবারও কাজ হয়নি। তাই গত রোববার থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিপুল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজ তাহের খান এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমদ মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমরা পেটের ক্ষুধার জন্য এখানে এসেছি। আমরা বলেছি, শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এর আগে বারবার আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু বেতন পাইনি। এবার লিখিত কাগজ পাওয়ার পর আমরা কর্মস্থলে ফিরব।’

জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজ তাহের খান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো ঘাটতি নেই। জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’