কোটা সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর পেনশন কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে অচলাবস্থা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক দায়িত্বে পরিবর্তন ঘিরে আরেক দফা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রদবদল আনা হয়। এতে কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা পুরোপুরি শুরু হয়েছে। দুটিতে চলছে অনলাইন ক্লাস। তবে এখনো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে ক্লাস শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট কমিয়ে আনতে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করব।বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব
প্রায় দুই মাস পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় গতি ফিরেছে। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে পুরোপুরি ক্লাস-পরীক্ষা চলমান। তবে আইন অনুষদে দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করায় ওই বিভাগে এখনো স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ১১ আগস্ট থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
এরপর ৮ সেপ্টেম্বর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান যোগদানের পর স্থবিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় পর ক্লাস শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে ক্লাস শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট কমিয়ে আনতে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের দায়িত্ব পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এর পর থেকেই পুরোদমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা পুরোদমে চলছে। আড়াই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীর এখনই চালু হচ্ছে না। নতুন উপাচার্য নিয়োগের পরে কবে থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে, তা জানানো হবে। তত দিন অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পাঠানো এক চিঠিতে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ অন্তত ১২টি শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেছেন। এতে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনলাইনে চলছে ক্লাস। দুই-তিনটি বিভাগে অলিখিতভাবে সশরীর কিছু ক্লাস চলছে। সব মিলিয়ে ঢিমেতালে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
গ্রীষ্মকালীন ছুটি, শিক্ষক ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) সাড়ে তিন মাস ধরে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষায় দ্রুতই ফিরতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এ কর্মসূচি করেন তাঁরা।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও অচলাবস্থার অবসান হয়নি। ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সেই সঙ্গে ৭৭৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর কেউই আগস্ট মাসের বেতন তুলতে পারেননি। উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক ৪০ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করার কারণে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়।
এ ছাড়া উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য হয়ে পড়ায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে মন্থরগতিতে।