এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের ১০ শতাংশ কাটার বিপরীতে আর্থিক ও অবসর–সুবিধা অবসরের ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করতে নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আগে প্রতি মাসে অবসরের জন্য একেকজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে মূল বেতনের ৪ শতাংশ অবসর–সুবিধার জন্য ও কল্যাণ–সুবিধার জন্য ২ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হতো। পরে তা বাড়িয়ে অবসরের জন্য ৬ শতাংশ ও কল্যাণ–সুবিধার জন্য ৪ শতাংশ করা হয়। এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে বিপ্লব কান্তি দাসসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৩১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী ২০১৯ সালে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দেন। ১০ শতাংশ অর্থ কাটার বিপরীতে সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনকারীপক্ষ সম্পূরক আবেদন করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট সম্পূরক রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল চূড়ন্ত (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর–সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মামুন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
রায়ের পরে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতনের ১০ শতাংশ কাটার বিপরীতে আনুপাতিক হারে আর্থিক সুবিধা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারীদের অবসরের আর্থিক সুবিধা তাঁদের অবসরের ছয় মাসের মধ্যে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতিমালা করতেও বলা হয়েছে।’
২০১৯ সালের আগপর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে তাঁদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ (৪ শতাংশ অবসর ও কল্যাণ–সুবিধার জন্য ২ শতাংশ) কাটা হতো বলে জানান রিট আবেদনকারীদের এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ (অবসর সুবিধার জন্য ৬ শতাংশ ও কল্যাণ–সুবিধার জন্য ৪ শতাংশ) করা হয়, যা ২০১৯ সালে কার্যকর হয়। অবসর ও কল্যাণ–সুবিধার টাকা পেতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কমপক্ষে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু বেতন হতে অতিরিক্তি অর্থ কাটার বিপরীতে শিক্ষক–কর্মচারীদের জন্য বাড়তি কোনো আর্থিক সুবিধা রাখা হয়নি। এসব দিক তুলে ধরে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই রিট করা হয়।’
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর–সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের আইনজীবী মামুন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক–কর্মচারীদের কাছ থেকে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কাটার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’