স্লোভেনিয়া মধ্য ইউরোপে ছোট একটি দেশ। আয়তন যেমন খুব বেশি বড় নয়, ঠিক তেমনি দেশটিতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। ২১ লাখের কাছাকাছি জনসংখ্যার মধ্য ইউরোপের দেশটির উত্তরে অস্ট্রিয়া, পশ্চিমে ইতালি, উত্তর-পূর্বে হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পূর্বে ক্রোয়েশিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূল দ্বারা বেষ্টিত। ইউরোপের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল যথা: আল্পস পর্বতমালা, প্যানোনিয়ান প্লেট, ভূমধ্যসাগর এবং ডিনারেইডসের মিলন ঘটেছে এ স্লোভেনিয়ায় এসে।
লুবলিয়ানা দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। স্লোভেনিয়া একসময় লিবারেল কমিউনিজমের ভিত্তি ভূমি হিসেবে পরিচিত সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসেবে স্লোভেনিয়া যুগোস্লাভিয়ার জোট থেকে বেরিয়ে নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়া সে সময় স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতার দাবিকে অস্বীকার করে। শুরু হয় যুদ্ধ, যা ১০ দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিলও। এ জন্য ইতিহাসে স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতাযুদ্ধকে ১০ দিনের যুদ্ধ নামেও অভিহিত করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ছিল ইউরোপ মহাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সংগঠিত যুদ্ধ, যেখানে ৭৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। তাই স্লোভেনিয়াকে অপেক্ষাকৃতভাবে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিলেও ভুল হবে না। তবে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে থাকে। ২০০৪ সালে স্লোভেনিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ পায়। ২০০৭ সালে টোলারের বদলে ইউরো দেশটির জাতীয় মুদ্রা হয়। একসময় কমিউনিজম শাসনের প্রচলন ছিল, এমন রাষ্ট্রের মধ্যে স্লোভেনিয়াই সর্বপ্রথম ইউরোর ব্যবহার শুরু করে। ব্রাউন বিয়ার, বিভিন্ন ধরনের সুউচ্চ পর্বতমালা বিশেষ করে আল্পস পর্বতমালা ও বিভিন্ন হৃদ ও স্কি রিসোর্টের জন্য স্লোভেনিয়া পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল।
শিক্ষাক্ষেত্রে দেশটির অগগ্রতি চোখে পড়ার মতো। স্লোভিন দেশটির মানুষের প্রধান ভাষা হলেও সর্বত্র প্রায় সবাই ইংরেজি বলতে পারেন। ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা, ইউনিভার্সিটি অব মারিবোর, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, ইউনিভার্সিটি অব প্রিমরস্কা দেশটির উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা এবং ইউনিভার্সিটি অব মারিবোর আন্তর্জাতিক যেকোনো সূচকে সারা পৃথিবীর প্রথম পাঁচ শটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্থান পেয়েছে।
আমাদের দেশ থেকে যখন কেউ বাইরের কোনো দেশে আসার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, প্রথমে তাঁর মাথায় যে জিনিসটি কাজ করে, সেটি হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার এবং এ ক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া অনেকটাই নমনীয়। কেননা স্লোভেনিয়ার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডিগ্রি প্রোগ্রাম পাওয়া যায় ইংরেজিতে এবং এখনো ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় স্লোভেনিয়ায় অনেক কম খরচে পড়াশোনা করা যায়। স্লোভেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্সসহ যেকোনো লেভেলে পড়াশোনা করতে হলে এক বছরে ২ হাজার ৮০০ ইউরো থেকে ৪ হাজার ইউরোর মতো টিউশন ফির প্রয়োজন এবং দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয়ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেক কম। কিছু ইউনিভার্সিটিতে কিছু নির্দিষ্ট সাবজেক্টের ক্ষেত্রে এক বছরে ৮ হাজার ইউরো টিউশন ফির প্রয়োজন হতে পারে।
আবার আমাদের দেশ থেকে যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে আসতে চান অনেকের মাঝেই পার্টটাইম চাকরির চিন্তাভাবনা কাজ করে এবং এ ক্ষেত্রেও স্লোভেনিয়া অনেকটা নমনীয়। ‘এম জব সার্ভিস’ এবং ‘ই-স্টুডেন্টস্কি সার্ভিস’ নামে দুটি অর্গানাইজেশন রয়েছে, যাঁরা শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম চাকরির ব্যাপারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে থাকে। দুটি অর্গানাইজেশন স্লোভেনিয়ার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আরও রয়েছে ‘বনি বা সাবসিডাইজড মিল’ এবং ‘সাবসিডাইজসড বাস সার্ভিস’ নামে দুটি বিশেষ পরিষেবা যেখানে আপনি একজন স্টুডেন্ট হিসেবে অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার কিংবা গণপরিবহন ব্যবহারের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
স্লোভেনিয়ার বেশির ভাগ ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে হলে আপনাকে এই লিঙ্কে (https://portal.evs.gov.si/prijava/?locale=en) গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে অ্যাপ্লিকেশন শুরু করতে হবে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যাডমিশনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণ করা শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত অ্যাপ্লিকেশনের সময়সীমা থাকে। সাধারণত প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সেশনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণ করা হয়; তবে কদাচিৎ কিছু ইউনিভার্সিটিতে কিছু নির্দিষ্ট সাবজেক্টের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ সেশনের জন্যও অ্যাপ্লিকেশন নেওয়া হয়। প্রতিবছরের অক্টোবর মাস থেকে স্লোভেনিয়ার বেশির ভাগ ইউনিভার্সিটিতে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে ‘Academic Year’ এবং আপনার পছন্দের ইউনিভার্সিটি ও পছন্দের সাবজেক্ট সিলেক্ট করে একটা অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে আপনার পার্সোনাল ডিটেইলস চাওয়া হবে। স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলোতে অ্যাপ্লিকেশন করার ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ফি নেওয়া হয় না।
অনলাইনে ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর কাছে একটি ই-মেইল পাঠানো হয় এবং এ ই-মেইলে অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে একটি পিডিএফ ফাইল দেখতে পাওয়া যায়। এ পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে হবে এবং পরে সেটাকে প্রিন্ট আউট করে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর একটি স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করার কয়েক দিনের মধ্যে অ্যাপ্লিকেশন পূরণ করার সময় যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছিল, সে ঠিকানায় ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডমিশন অফিসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হবে। এরপর সে চিঠিতে উল্লেখিত ঠিকানায় প্রিন্ট আউট করা উক্ত পিডিএফ ফাইলের কপি যেটিতে একটু আগে সিগনেচার করার কথা বলেছিলাম, সেটি কুরিয়ার সহযোগে ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডমিশন অফিসে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গে আরও যেসব ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে:
i) যাবতীয় সব একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের অরিজিনাল কপি;
ii) যাবতীয় সব একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের এক সেট সত্যায়িত কপি;
iii) যেকোনো ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি সার্টিফিকেটের কপি;
এ ছাড়া মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য যদি কেউ আবেদন করে থাকেন, তাঁর ক্ষেত্রে অনেক সময় সিভি, মোটিভেশনাল লেটার এমনকি ব্যাচেলরের কোর্স ডেসক্রিপশনও চাওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশিটের কিংবা অন্য কোনো ধরনের ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে লিগালাইজেশন করতে বলা হয়। স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে বাংলাদেশি কোনো ডকুমেন্ট লিগালাইজেশন করার শর্ত হচ্ছে প্রথমে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত বাংলাদেশের এম্বাসি থেকে সেগুলোকে অ্যাটাস্টেশন করা।
স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি আপনার ডকুমেন্ট ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার যাবতীয় একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের কপি স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে লিগালাইজেশন করানো হয়। আর স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স বাংলাদেশের কোনো ডকুমেন্ট ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার ডকুমেন্ট অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করাতে পারছেন এবং তাদের ওয়েবসাইটে এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে।
একমাত্র ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কোনো ডকুমেন্ট অ্যাটাস্টেড করা হলেই কেবল স্লোভেনিয়ার ফরেন মিনিস্ট্রি আপনার ডকুমেন্ট লিগালাইজেশনের জন্য গ্রহণ করবে। স্লোভেনিয়ার ফরেন মিনিস্ট্রি কোনো ডকুমেন্ট লিগালাইজেশনের জন্য পৃষ্ঠা প্রতি তিন ইউরো করে রাখে এবং দুর্ভাগ্যবশত তারা কোনো কুরিয়ার কপি গ্রহণ করে না। অনেক সময় ইউনিভার্সিটিকে অনুরোধ করলে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ লিগালাইজেশনের ব্যবস্থা করে দেয়। ভিয়েনায় বাংলাদেশ এম্বাসি থেকে কোনো ডকুমেন্ট অ্যাটাস্টেশন করার শর্ত হচ্ছে, প্রথমে সেটিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে এবং ভিয়েনার বাংলাদেশ এম্বাসি যেকোনো ডকুমেন্ট অ্যাটাস্টেশন করতে পৃষ্ঠাপ্রতি ১০ ইউরো করে রাখে।
সাধারণত স্লোভেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দেয় যাবতীয় ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য। তবে এ সময়ের মধ্যে পাঠাতে না পারলে আপনি অতিরিক্ত সময়সীমার জন্য আবেদন করতে পারেন এবং আপনাকে এর জন্য নির্ধারিত তারিখের আগে ইউনিভার্সিটিকে ই-মেইল দিতে হবে।
অ্যাডমিশন নিশ্চিত হয়ে গেলে আপনি ইউনিভার্সিটি থেকে লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্স পাবেন। আপনাকে কুরিয়ারের মাধ্যমে লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্স পাঠানো হবে। যদি লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্সে এ সময় টিউশন ফি প্রদানের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে যেকোনো ব্যাংকে গিয়ে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করে টিউশন ফি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি গ্রহণের পর আপনাকে চূড়ান্ত ‘লেটার অব ইনরোলমেন্ট’ পাঠাবে।
ইউনিভার্সিটিতে ইনরোলমেন্ট নিশ্চিত হয়ে গেলে আপনাকে ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে।
স্লোভেনিয়ার কোনো দূতাবাস বাংলাদেশে না থাকায় আপনাকে ভিসা অথবা টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন করার ক্ষেত্রে দিল্লিতে যেতে হবে। দিল্লিতে স্লোভেনিয়ার এম্বাসির ওয়েবসাইট http://www.newdelhi.embassy.si। সবার সুবিধার জন্য দিল্লিতে স্লোভেনিয়ার অ্যাম্বাসির ঠিকানা এখানে উল্লেখ করছি:
Embassy of the Republic of Slovenia;
New Delhi; A - 5/4,
Vasant Vihar;
New Delhi 110 057;
India.
বিস্তারিত তথ্যের জন্য:
http://www.newdelhi.embassy.si/index.php?id=37&L=1
ই-মেইলের মাধ্যমে আপনি স্লোভেনিয়ার এম্বাসিতে ভিসার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট পেতে পারেন। এম্বাসিতে ই-মেইল করার ঠিকানা: sloembassy.newdelhi@gov.si
এম্বাসি ফি এ বছর থেকে ৭৭ ইউরো করা হয়েছে, এম্বাসির ওয়েবসাইটে গেলে আপনি ব্যাংক ডিটেইলস পাবেন, যেখানে এ ফি জমা দিতে হবে। এরপর তাদের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট অ্যাপ্লিকেশনের ফরম ডাউনলোডের পর সেটা পূরণ করতে হবে। ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট:
i) ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রদত্ত লেটার অব ইনরোলমেন্ট;
ii) স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক প্রদত্ত একটি অবজারভেশন লেটার, যা ইউনিভার্সিটি আপনাকে লেটার অব ইনরোলমেন্টের সঙ্গে প্রেরণ করবে;
iii) পাসপোর্ট, উল্লেখ্য যে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে তিন মাস থাকতে হবে (তবে ছয় মাস হলে উত্তম) এবং পাসপোর্টে অন্ততপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে এবং সেই সঙ্গে পুরো পাসপোর্টের ফটোকপি এবং ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের সময়সীমা থেকে শুরু করে তিন বছরের মধ্যে যদি কোনো দেশে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সে দেশের ভিসা, অ্যারাইভাল ও ডিপার্চার সিলের ফটোকপি;
iv) মেডিকেল ইনস্যুরেন্স;
v) পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কপি (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কোনোভাবেই যেনও তিন মাসের অধিক পুরোনো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে);
vi) সেলফ ফাইন্যান্সিং স্টুডেন্ট হলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের অরিজিনাল কপি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট কমপক্ষে ছয় মাসের হতে হবে এবং এক বছরের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে যে পরিমাণ খরচ দাঁড়ায়, তার সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকে থাকতে হবে। ফাইন্যান্সিয়াল স্পনসরের অ্যাফিডেভিট অত্যাবশ্যক। স্পনসর যদি অন্য কেউ হয়, সে ক্ষেত্রে একটা লিখিত স্টেটমেন্ট অত্যাবশ্যক, যেখানে উল্লেখ থাকতে হবে যে স্লোভেনিয়ায় থাকাকালীন তিনি আপনার লেখাপড়া, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় ব্য্যভার বহন করতে চলেছেন এবং এ লিখিত স্টেটমেন্ট নোটারাইজড করতে হবে কিংবা প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে;
vii) স্কলারশিপ হোল্ডার হলে স্কলারশিপ লেটার;
viii) ফ্লাইটের রিজার্ভেশনের কপি;
ix) 4.5 সেমি. X 3.5 সেমির দুই কপি ছবি;
x) অ্যাকোমডেশনের কনফার্মেশন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি এ কনফারমেশন পেতে পারেন;
xi) সব সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টের এক সেট অরিজিনাল এবং এক সেট অ্যাটাস্টেড কপি। এম্বাসির জন্য সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টের কপিগুলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিলেই হবে;
xii) ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি টেস্টের সার্টিফিকেট;
xiii) বার্থ সার্টিফিকেটের কপি, বার্থ সার্টিফিকেট অবশ্যই আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যারা সত্যায়িত হতে হবে;
অ্যাপয়েমেন্টের তারিখে সব ডকুমেন্ট অ্যাম্বাসিতে জমা দিয়ে আসতে হবে। এম্বাসি ডকুমেন্ট জমা নেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারভিউ এবং বায়োম্যাট্রিক নেবে।
ভিসার মেলে চার থেকে ছয় সপ্তাহে
ভিসার সিদ্ধান্ত আসতে কমপক্ষে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে; এ জন্য ভালো হয় যদি এম্বাসির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর দিল্লি থেকে পাসপোর্ট উইথড্রল করে আপনি দেশে চলে আসেন এবং পরবর্তী সময়ে আবার যখন ভিসার সিদ্ধান্ত আসার পর আপনি আবার দিল্লিতে গেলেন এম্বাসির উদ্দেশ্যে।
স্লোভেনিয়ায় বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ সীমাবদ্ধ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে একাডেমিক রেজাল্টের ভিত্তিতে অনেক সময় ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে হয়তোবা কিছু স্কলারশিপ বা স্টাইপেন্ডের ব্যবস্থা করা যায়। এ জন্য সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সম্প্রতি দিল্লিতে স্লোভেনিয় দূতাবাস স্টুডেন্ট ভিসার অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যাঁরা ব্যাচেলর প্রোগ্রামর জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে English Proficiency Test বিশেষ করে IELTS (Minimum Level CEFR B2) বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। (রেফারেন্স: http://www.newdelhi.embassy.si/index.php?id=919&L=1)
লং টার্ম রেসিডেন্ট পারমিট অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ধরনের স্টিকার ভিসার পরিবর্তে সরাসরি টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট প্রদান করা হয়।
এবার আসা যাক স্লোভেনিয়ায় অভিবাসন বিষয়ে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে যাঁরা বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান, তাঁদের সবার চিন্তা থাকে কীভাবে ইউরোপ, নর্থ আমেরিকা কিংবা ওশেনিয়ার কোনো একটি উন্নত রাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়া যায়। স্লোভেনিয়া এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের কাছে একটি পছন্দের ডেসটিনেশন হতে পারে এবং স্লোভেনিয়ার ক্ষেত্রে আরও একটি বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এখনো এখানে খুব বেশি বাইরের মানুষ নেই। স্লোভেনিয়ার ইমিগ্রেশন পলিসি দীর্ঘ মেয়াদে যাঁরা দেশটিতে বসবাস করতে চান, তাঁদের জন্য এখনো মোটামুটি আশানুরূপ বলা চলে। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে কারও যদি একটানা পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করার এবং সেই সঙ্গে যদি এ পাঁচ বছর ফুলটাইম কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তিনি স্লোভেনিয়ার পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর যদি আপনি শিক্ষার্থী হন, তাহলে একটানা ১০ বছর বৈধভাবে স্লোভেনিয়ায় বসবাস করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী অবস্থায় পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুই বছরকে এক বছর হিসেবে বিবেচনা হয়। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি তিন বছরের ব্যাচেলর কোর্স সম্পন্ন করেন স্লোভেনিয়া থেকে, তাহলে এ তিন বছরকে অর্ধেক অর্থাৎ দেড় বছর এবং সেই সঙ্গে আরও সাড়ে তিন বছর ফুলটাইম কাজ করার অভিজ্ঞতা দেখাতে পারলেই তিনি স্লোভেনিয়ার পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত স্থানীয় ভাষা জানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রতিবছর শেষে টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট বর্ধিত করার ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত সে রকম ঝামেলা নেই এখন পর্যন্ত; বিশেষ করে যাঁরা স্টুডেন্ট, তাঁদের জন্য। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অফিস থেকে শুধু একটি সার্টিফাইড লেটার যেটা আপনার স্টুডেন্ট স্ট্যাটাসকে ইঙ্গিত করবে সে ধরনের লেটার স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিস স্লোভেনিয়ার ভাষায় বলা হয় উপরাভনা এনোতাতে গিয়ে জমা দিলেই তাঁরা টিআরপি এক্সটেনশনের ব্যবস্থা করে দেয়।
স্লোভেনিয়ায় আসার আগে আমি প্রায় দেড় বছরের মতো হাঙ্গেরিতে ছিলাম এবং হাঙ্গেরির পেচ শহরে ইউনিভার্সিটি অব পেচে আমি লেখাপড়া করেছি। একই বিষয়ে, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস। ইউনিভার্সিটি অব পেচ থেকে আমি স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছাতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করেছি। আমাকে দিল্লিতে যেতে হয়নি নতুন করে আবার স্লোভেনিয়ায় ভিসার জন্য আবেদন করতে। স্লোভেনিয়ায় এসেই আমি সরাসরি স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করেছি। আমাকে প্রথমবার টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করার সময় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের কপির প্রয়োজন হয়েছিল। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের কপি অবশ্যই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করার পর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বাংলাদেশের এম্বাসি থেকে প্রি-লিগালাইজ বা অ্যাটাস্টেশন করে সর্বশেষ এ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লিগালাইজ করে স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে (স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষায় উপরাভনা এনোতা) জমা দিতে হয়েছিল।
স্লোভেনিয়ায় আসার পরপরই কিংবা এখানে আসার পর প্রথমবার টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু হওয়ার পর পাওয়ার পর সেটি বাড়ির মালিক কিংবা হোস্টেলের কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয় এবং স্থানীয় পুলিশের থেকে অথবা স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসের থেকে একটি সার্টিফিকেট নিতে হয় যে এ ঠিকানায় আমি বৈধভাবে বসবাস করছেন। সাধারণত হোস্টেল কর্তৃপক্ষ কিংবা আপনার বাড়ির মালিক স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কিংবা স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটি অফিস বা অবচিনার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেবে। পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স পাওয়ার জন্য স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের ওপর দক্ষতা প্রয়োজন না হলেও যদি কেউ এখানে সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে আগ্রহী হন, তাহলে তাঁকে স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পার্মান্যান্ট রেসিডেন্স পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ সাপেক্ষে স্লোভেনিয়ার সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা যায়। টানা ১০ বছর বৈধভাবে স্লোভেনিয়াতে বসবাসের পর সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা যায়।
জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এমনকি পার্শ্ববর্তী অস্ট্রিয়ার সঙ্গেও তুলনা করলে ঘণ্টা হিসেবে স্লোভেনিয়ায় মজুরি খুব বেশি একটা উচ্চ নয়। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে এসব দেশ থেকেও স্লোভেনিয়া অনেক দুর্বল। দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয়ও খুব বেশি একটা উচ্চ, এমনটা বলা যাবে না। সাধারণ ২২০ ইউরো হলে আমার এক মাসে ভালোমতো চলে যায়, তবে গড়পত্তা হিসেবে একজন স্টুডেন্টের এক মাসে থাকা–খাওয়া ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে আড়াই শ থেকে তিন শ ইউরো পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। যাঁরা রাজধানী শহরে বসবাস করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে এক মাসে সাড়ে চার শ ইউরোর মতো প্রয়োজন হতে পারে। এখনো দেশটির সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে একসময় সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রচলন ছিলও এমন দেশগুলো তো বটেই এমনকি মাল্টা, গ্রিস কিংবা পর্তুগালের মতো ইউরোপের দেশগুলো থেকেও অর্থনৈতিকভাবে স্লোভেনিয়া শক্তিশালী। এমনটি বলছে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে মাসিক ন্যূনতম মজুরি সাড়ে নয় শ ইউরো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাসিক ন্যূনতম মজুরি হিসেবে বর্তমানে স্লোভেনিয়া স্পেন থেকে এর দিক থেকে সামান্য পিছিয়ে। পার্টটাইম চাকরি করে ভালোমতো থাকা এবং খাওয়ার খরচ আপনি তুলতে পারলেও আপনি টিউশন ফি তুলতে পারবেন না পার্টটাইম কাজ করে। তবে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ডে যে রকম নিয়ম আছে যে স্টুডেন্ট অবস্থায় একজন ব্যক্তি এক সপ্তাহে বৈধভাবে বিশ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবেন না, স্লোভেনিয়ার আইনে এ রকম সুনির্দিষ্ট করে এখনো কিছু উল্লেখ নেই। তাই এখানে চাইলে একজন শিক্ষার্থী ফুলটাইম কাজ করতে পারেন।
ভিসা ও অভিবাসন–সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মের মাঝেমধ্যে পরিবর্তন আসে, তাই সবারই উচিত নিয়মিত এম্বাসি অথবা ইমিগ্রেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলো মাঝেমধ্যে অনুসন্ধান করা।
সব মিলিয়ে কীভাবে আপনারা উচ্চশিক্ষার জন্য স্লোভেনিয়ায় আসবেন, সে বিষয়ে আদ্যোপান্ত। আপনি যদি তুলনামূলক কম খরচে ইউরোপের কোনো একটি দেশের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান, তাহলে সে ক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ জায়গা।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া