বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ধ্যাকালীন সব কোর্স বন্ধ করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বন্ধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করাসহ ২৪ ধরনের ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। উচ্চশিক্ষায় দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি মনে করে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে উচ্চশিক্ষা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করেছে ইউজিসি। প্রতিবেদনটি রোববার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আশা করছেন, এই সুপারিশগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক ও ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। প্রতিবছরই ইউজিসি সরকারের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ থাকে। এবার নতুন বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
ইউজিসি বলেছে, দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘সান্ধ্যকালীন’, ‘উইকেন্ড’ ও ‘এক্সিকিউটিভ’ ইত্যাদি কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। এসব কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করছে। তাই এ ধরনের সব কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে ডিপ্লোমা, সংক্ষিপ্ত কোর্স, ভোকেশনাল কোর্স, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও খণ্ডকালীন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম পরিচালনা করার পক্ষে মত দিয়েছে ইউজিসি।
শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগ ও আর্থিক খরচ কমাতে দীর্ঘ আলোচনার পর গত বছর সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার আরও ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির কাজটি করবে। ইউজিসি বলেছে, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিও গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত পদ্ধতির আওতায় আনা দরকার। আর এ জন্য সরকার একটি নীতিমালা করতে পারে।
সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলো বন্ধের সুপারিশ সঠিক, এটি বাস্তবায়িত হওয়া দরকার। তবে মানে তারতম্য থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তিতে সমস্যা হতে পারে।নজরুল ইসলাম, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাকাজে চৌর্যবৃত্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন ইউজিসি। সংস্থাটি বলছে, এই ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্রে চুরির বিষয়টি সংজ্ঞায়িতও করা যাচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা আবশ্যক। শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মের মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করা এবং বাংলা গবেষণাপত্র ও পুস্তকের জন্য উন্নত মানের সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নিতেও বলেছে ইউজিসি।
দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক আইনে চলছে। ইউজিসির মূল্যায়ন, এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ জন্য ১৯৭৩–এর আদেশে পরিচালিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোর জন্য একটি অভিন্ন আইন করে তা বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে বলে ইউজিসি মনে করে।
ইউজিসির পর্যবেক্ষণ হলো, বর্তমানে কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের বিদ্যমান আর্থিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। এ জন্য স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে একটি অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা প্রণয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে করা অভিন্ন নীতিমালাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা, মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষণ প্রশিক্ষণ একাডেমি, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, জাতীয় গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলেও ইউজিসির সুপারিশে রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক যোগ্যতা, প্রশাসনিক দক্ষতার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ইউজিসির মতামত নিতে পারে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক ও ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। প্রতিবছরই ইউজিসি সরকারের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ থাকে। এবার নতুন বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ খাতের উপকরণ (যেমন ডিভাইস, ডেটা প্যাকেজ ইত্যাদি) সহজলভ্য করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর শিক্ষার্থী, গবেষক ও শিক্ষকদের আরও বেশি গবেষণামুখী করতে সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো অতীব জরুরি বলেও মনে করে ইউজিসি।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বেশির ভাগ সুপারিশের সঙ্গেও একমত। কিছু সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত আছে তাঁর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলো বন্ধের সুপারিশ সঠিক, এটি বাস্তবায়িত হওয়া দরকার। তবে মানে তারতম্য থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তিতে সমস্যা হতে পারে। তিনি মনে করেন, গবেষণাকাজও নীতিমালা মেনে হওয়া উচিত।