ঢাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সমাবেশ

দেশে সব খোলা তাহলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কেন

এ প্রশাসনের অপমৃত্যু ঘটেছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এ মৃত প্রশাসনের প্রতীকী লাশ নিয়ে আগামী মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে খাটিয়া মিছিল করা হবে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে। এসব কর্মসূচি শেষে একই দাবিতে আগামী মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপমৃত্যু ঘটা’ প্রশাসনের প্রতীকী মিছিল নিয়ে খাটিয়া মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

‘হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও আন্দোলন’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ রোববার সকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশের আয়োজন করেন।

সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল বলেন, দেশের অফিস-আদালত, গার্মেন্টস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, শপিং মল—সবই খোলা আছে। উৎসব, আয়োজনও হচ্ছে। তাহলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কেন? এ প্রশ্ন আমাকেও পীড়িত করে। এর কারণ কী হতে পারে? এর অন্যতম কারণ সরকারের মধ্যে থাকা বৈষম্যের নীতি। সরকারে যাঁরা আছেন, এর মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই শুধু নন, আমলারাও আছেন, তাঁদের অধিকাংশের সন্তান-পরিবার-পরিজন বিদেশে থাকেন। অন্তত বাংলাদেশের কোনো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে, অত্যন্ত সাপোর্টিভ একটা সিস্টেমে তাঁরা থাকেন। তাঁদের পড়াশোনায় কোনো অসুবিধা হয় না। অসুবিধা হয় নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের। তাঁদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

প্রতীকী লাশ নিয়ে আগামী মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে খাটিয়া মিছিল করা হবে

আসিফ নজরুল অভিযোগ বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু বর্তমান সরকারের কাছে জাতির মেরুদণ্ড হচ্ছে শাসন। শাসনকার্যের জন্য যা দরকার—গার্মেন্টস-শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, উৎসব আয়োজন, শপিং মল, গণপরিবহন খোলা রাখা; অর্থাৎ শাসনকে অব্যাহত রাখার জন্য যা দরকার, তাতে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। সমস্যা হচ্ছে রাজনীতি ও শিক্ষা নিয়ে। এ দুটিকে বন্ধ রাখতে পারলেই সরকার নিরাপদে থাকে। শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকলে তারা যা-ই করুক, তার কোনো প্রতিবাদ হবে না। এ প্রতিবাদ সরকারের শাসন পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, এ ধরনের সামান্য আশঙ্কা থেকেই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখেছে। মনে হচ্ছে, সম্ভব হলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে তৈরি আছে। সবাই গোল্লায় যাক, আমরা ক্ষমতায় থাকি নিরাপদে। কোনো প্রতিবাদ, আন্দোলন যেন না হয়। এ অবস্থার তীব্র নিন্দা জানাই।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবটি দেখা হচ্ছে না। ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাদক, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি প্রবণতা আসছে। দেশে খেলার মাঠ নেই। গ্রামগঞ্জে যেসব ছেলেমেয়ে ঘরের মধ্যে রুদ্ধ হয়ে আছে, তারা সারাদিন কী করবে? যৌবন হচ্ছে সৃষ্টি, বিদ্রোহ ও নিজেকে গডার সময়। এ রকম একটা সময়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি তরুণকে করোনার কারণ দেখিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার অনুরোধ করছি। আমি বলছি না যে সবাইকে একসঙ্গে ক্লাস করানো হোক। অনেক ধরনের পদ্ধতি আছে—বিকল্প ক্লাস নেওয়া যেতে পারে, সপ্তাহে দুদিন ক্লাস নেওয়া যেতে পারে, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া যেতে পারে, গ্রামগঞ্জের স্কুলগুলো সপ্তাহে অন্তত এক-দুদিন খোলা রাখা যেতে পারে।’

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাটা সরকারের ব্যর্থতা। সরকার যদি জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাকে ধ্বংস করে, আমরা বসে থাকব না। শিক্ষার্থীরা আজকে হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন আজ ভূলুণ্ঠিত।’

অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সাদিক মাহবুব ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে উপাচার্য এখনো কীভাবে সুস্থ আছেন, এই প্রশ্ন আমাদের করা দরকার। শিক্ষার্থীদের সমস্যার দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে। কারণ, আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা ঠিকমতো নেওয়াটা তাঁদেরই দায়িত্ব। অথচ তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই।’

ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আসিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এ আন্দোলনের নেতা আসিফ মাহমুদ।

আসিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাবনায় শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত। এ প্রশাসনের অপমৃত্যু ঘটেছে বলে আমরা মনে করছি। এ মৃত প্রশাসনের প্রতীকী লাশ নিয়ে আগামী মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আমরা খাটিয়া মিছিল করব।’