২০১৩-২০১৪ সালে জাতীয়করণ হওয়া দেশের ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের টাইম স্কেল–সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি বিষয়ে আনা রিট তিন সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন বিচারপতি সমন্বয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ১৩ জানুয়ারি দেওয়া এ আদেশ গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। আদেশের কপিপ্রাপ্তির তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে রিট মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।
আদেশের কপি প্রকাশের বিষয়টি আজ বুধবার জানান শিক্ষকদের পক্ষে আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘টাইম স্কেল’-এর সুবিধা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ পরিপত্র স্থগিত করেন এবং বিষয়টি নিয়ে রুলও জারি করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। পরে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন সপ্তাহের মধ্যে রিট মামলাটি নিষ্পত্তি করতে ১৩ জানুয়ারি আদেশ দেন। বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত আদেশটি ১৯ জানুয়ারি প্রকাশ পায়। এখন এ আদেশ প্রাপ্তির তিন সপ্তাহের মধ্যে রিট মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে হবে।
এর আগে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশ বহাল রাখায় গত বছরের ২০ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আদালত অবমাননা প্রশ্নে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের পক্ষে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সেলিনা আকতার। নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি শিক্ষক মহাসমাবেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৭৭২ শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়।
ওই সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ বিধির গেজেট প্রকাশ করেন। এরপর থেকে ওই বিধি অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বেসরকারি চাকরি কার্যকর ধরে শিক্ষকেরা বেতন-ভাতা, টাইম স্কেল, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতিসহ সব ধরনের সুবিধাদি ভোগ করে আসছেন। মূলত ওই গেজেটের আলোকেই শিক্ষকেরা টাইম স্কেল পেয়ে আসছেন। অথচ এর মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে,পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বছরের গত বছরের ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির পক্ষে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহীর গাঙ্গোপাড়া বাগমারার প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা বাদী হয়ে এ রিট করেন।
গত ৩১ আগস্ট ওই রিটের শুনানি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এই আদেশের অনুলিপি গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়সহ মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য মহাহিসাব রক্ষক নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে আদালতের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশও পাঠানো হয়।