রংপুরের সামিয়া যেভাবে উদ্যোক্তা হলেন

করোনাকালের দীর্ঘ বন্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রুটিন সব ওলট–পালট হয়ে গেছে। পড়ালেখা শেষ করে যাঁরা দ্রুত পেশাজীবনে পা রাখার কথা ভাবছিলেন, সেশনজটের দুর্ভাবনা নিশ্চয়ই তাঁদের ভোগাচ্ছে। তবে এই দুর্যোগেও হাল ছাড়েননি অনেক তরুণ। পড়ালেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি সেরে রাখছেন তাঁরা।

সামিয়া ইয়াসমিন
ছবি: সংগৃহীত

রংপুর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সামিয়া ইয়াসমিন। করোনার দুর্যোগে যখন কলেজ বন্ধ হলো, সামিয়া থেমে থাকেননি। নিজে উদ্যোক্তা হয়েছেন, অন্যদেরও যুক্ত করেছেন তাঁর সঙ্গে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে গত দেড় বছরে তাঁর ব্যস্ততা বেড়েছে আরও। কখনো দুস্থ মানুষের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা নিয়ে গেছেন, কখনো রক্তদানের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। করোনাকালে আরও সমৃদ্ধ হতে চেষ্টা করেছেন এই শিক্ষার্থী।

রংপুর শহরের কেরানীপাড়া এলাকায় থাকেন সামিয়া। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মহামারিকালে কীভাবে নিজে আয় করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, ভাবছিলেন। এ বছরের শুরুর দিকে ফেসবুকে ‘বাঁধাসুতো’নামে একটা পেজ খোলেন অনলাইনে বিকিকিনির আশায়। কিন্তু হাত তো একেবারেই শূন্য। এক বন্ধুর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা ঋণ করে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সামিয়া বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে খুব কম দামে কয়েকটা পাঞ্জাবি কিনেছিলাম। একদিনেই সব পাঞ্জাবি বিক্রি হয়ে গেল। লাভ হলো এক হাজার টাকা। সেই থেকেই সাহস পেয়েছিলাম।’ কিছু টাকা সংগ্রহ করে একটু একটু করে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া; মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা, গাউন, হিজাব, তাঁতের শাড়ি—এমন নানা কিছু বিক্রি করতে শুরু করেন সামিয়া। ফেসবুকে প্রচার করে ভালোই সাড়া পান। পণ্য পৌঁছে দিতে কখনো কখনো নিজেই ছুটে যান। জানালেন, কয়েক মাসের মধ্যে লক্ষাধিক টাকার ব্যবসা করেছেন তিনি।

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের সঙ্গে চার বছর ধরে যুক্ত সামিয়া। এখন তিনি সংগঠনের রংপুর সরকারি কলেজ ইউনিটের সভাপতি। তাই দায়িত্বও অনেক। কলেজ বন্ধ থাকলেও, সংগঠনের কাজ তো থেমে থাকতে পারে না। করোনায় তাঁদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে আরও। সামিয়া বলেন, ‘আমরা করোনার সময় প্রায় ১২০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছি। করোনার দুর্যোগে যাঁরা খাবারের কষ্টে ভুগছেন, তাঁদের অনেকের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। স্বাস্থ্য সচেতনতায় শহরে প্রচারণা চালিয়েছি। রোজগার করতে শেখা এবং স্রেফ আত্মতৃপ্তির জন্যই এত কিছু করা।। ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না।’