বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি হতে পারবেন না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনেকেরই নজরে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞপ্তিটির নানা দিক নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা করছেন।

ঢাবির জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে সরাসরি ভর্তি হতে পারবেন না। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির আগে তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রিধারীদের আবেদনপত্র সংগ্রহের আগে ডিগ্রির সমতা নিরূপণের জন্য দরখাস্ত করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন একটি সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, এ ধরনের নীতিমালা বৈষম্য তৈরি করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের নীতিমালা নানা দিক দিয়ে অগ্রহণযোগ্য।

প্রথমত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ দ্বারা পরিচালিত হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে। সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে তাঁরা কেন সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন না, তার কোনো ব্যাখ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেয়নি।

এ ধরনের একটি নীতিমালা আসলে এমন একটি ধারণা তৈরি করবে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তেমন কিছু শিখছেন না অথবা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে শিখছেন না। এমন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুই ধরনের নিয়ম একটি বৈষম্য।

রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

দ্বিতীয়ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সন্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর এবং এমবিএ প্রোগ্রামগুলো চলছে সেখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) করে এসে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব প্রোগ্রাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যে ক্লাস ঠিকমতো না নেওয়া হলেও অস্বাভাবিক টিউশন ফি নেওয়া হয়। এসব প্রোগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারলে কেন পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন না। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রোগ্রামে দুই ধরনের নিয়ম কেন থাকবে?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী পৃথিবীর প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করছেন।

অনেকে পিএইচডি শেষ করে ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতা করছেন। সেটা সম্ভব হলে নিজ দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন তাঁরা সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি হতে পারবেন না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ ধরনের একটি নীতিমালার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে এমন বৈষম্যমূলক একটি নীতিমালা প্রত্যাহার করা জরুরি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা আমাদের এখানে খুব পুরোনো নয়, ৯০–এর দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাত্রা শুরু করেছে। প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ ভালো করছে। আবার এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আশানুরূপ নয়। কিন্তু সে জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পিএইচডি করার মতো উপযুক্ত না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে কারও ব্যাপারে আবেদনের পর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

*লেখক: সাংবাদিক, গবেষক। ব‌র্তমানে ইউনিভা‌র্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারে সাংবাদিকতায় পিএইচডি করছেন।