নির্ধারিত মেয়াদের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বর্তমান কমিটির অতিরিক্ত মেয়াদও আজ সোমবার শেষ হচ্ছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আজকের পর ডাকসুর কমিটি ভেঙে যাবে। তবে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পদে বহাল থাকতে চাইছেন। যদিও মেয়াদ শেষে পদে থাকাকে ‘অনৈতিক’ বলে মনে করছেন ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন।
গত বছরের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে ডাকসুর জিএস, এজিএসসহ ২৫ পদের ২৩টিতে জয় পায় ছাত্রলীগ। ভিপিসহ দুটি পদে জয় পায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এরপর ২৩ মার্চ দায়িত্ব নেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সেই হিসাবে গত ২২ মার্চ নির্ধারিত ৩৬৫ দিনের মেয়াদ পূর্ণ করেছে ডাকসুর বর্তমান কমিটি।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৬ (গ) ধারা বলছে, নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন না হলে তাঁরা অতিরিক্ত ৯০ দিন দায়িত্বে থাকবেন। ওই ৯০ দিনের আগে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাকসুর আগের কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে।
গত মার্চে নির্ধারিত ৩৬৫ দিন পূর্ণ করার পর আজ সোমবার অতিরিক্ত ৯০ দিনও অতিক্রম করল ডাকসুর কমিটি। ফলে আগামীকাল স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেঙে যাচ্ছে এই কমিটি।
তবে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ও জিএস গোলাম রাব্বানীর যুক্তি, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাঁরা পুরোপুরি দায়িত্ব পালন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
গঠনতন্ত্রে ডাকসুর কমিটির মেয়াদ ৩৬৫ দিন বলা হলেও নুরুল হক ও গোলাম রাব্বানী দুজনেরই ভাষ্য, এটি দিন নয়, বরং কার্যদিবস।
তবে মেয়াদ শেষে পদে থাকাকে ‘অগণতান্ত্রিক, গঠনতন্ত্রবিরোধী ও অনৈতিক’ বলছেন এজিএস সাদ্দাম হোসেন।
এ নিয়ে আজ রাতে উপাচার্য ও পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে ডাকসু প্রতিনিধিদের একটি অনানুষ্ঠানিক সভা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিপি ও জিএস।
ভিপি-জিএস দুজনই মনে করেন, করোনার কারণে এই মুহূর্তে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পরিস্থিতি নেই। ডাকসু যাতে আবার অচল হয়ে না যায়, তার জন্য পরবর্তী নির্বাচন সম্ভব করাকে নিজেদের ‘দায়বদ্ধতা’ বলেও উল্লেখ করছেন তাঁরা।
ডাকসু ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে গত তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক ৩৬৫ কার্যদিবস মেয়াদে পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। তাই ডাকসুর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করতে চাই। অবশ্যই ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এই মুহূর্তে ডাকসুর কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা উপাচার্যও ভাবছেন না বলে মনে হয়।’
অতিরিক্ত মেয়াদ শেষ হলেও ‘অসমাপ্ত কাজ’ সমাপ্ত করতে পদে থাকতে চাইছেন ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা নির্ধারিত ৩৬৫ কর্মদিবস পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের অসমাপ্ত কিছু কাজ রয়ে গেছে। ডাকসুর ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বাজেটে এখনো প্রায় ৯০ লাখ টাকা অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এই অর্থ দিয়ে ডাকসুর শিক্ষার্থী সহায়তা ফান্ডের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে চাই। এ ছাড়া সামনে (২৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সভা রয়েছে। সেখানে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো তুলে ধরতে চাই। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু কার্যকর হয়েছে। আমরা চাই না, এটা বন্ধ হয়ে যাক। ডাকসু কার্যকর না থাকার চেয়ে থাকাটা তো ভালো।’
রাব্বানীর দাবি, ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপাচার্য চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ডাকসুর কমিটি বহাল রাখাসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯০ সালের ডাকসু কমিটির (আমান-খোকন) পরবর্তী ৬ বছর কার্যকর থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পদে না থাকার বিষয়ে কঠোর অবস্থান ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৩৬৫ দিনের জন্য আমাদের নির্বাচিত করেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে আরও ৯০ দিন দায়িত্ব পালনের পর দায়িত্বে থাকাটা হবে অগণতান্ত্রিক, গঠনতন্ত্রবিরোধী ও অনৈতিক। ডাকসুর প্রতিনিধিরা যেদিন থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেন, সেদিন থেকেই তাঁদের কার্যদিবস শুরু হয়। প্রতিদিনই তাঁদের জন্য কার্যদিবস। ৩৬৫ দিন ও অতিরিক্ত ৯০ দিনের মেয়াদ একটি গঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। উপাচার্যেরও এই সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রের কোনো জায়গায় অস্পষ্টতা থাকলে উপাচার্য সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। পরিস্থিতি ভালো হলে ডাকসুর নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন অনুসরণ করেই সবকিছু করা হবে।’