বিজ্ঞানের জগতে নোবেলজয়ী গবেষক অ্যান্ড্রু ফায়ারের পথচলা কখনো মসৃণ ছিল না। কখনো গবেষণার কাঙ্ক্ষিত তথ্য তিনি খুঁজে পাননি। আবার কখনো তথ্য সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেননি। তবে হাল ছেড়ে দেননি। ফলাফল ২০০৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। একটি গবেষণা প্রকল্প ব্যর্থ হলে তিনি আরেকটি প্রকল্প শুরু করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানের চমকপ্রদ আবিষ্কার, গবেষক হিসেবে তাঁর সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প শুনিয়েছেন তিনি।
অনলাইনেই বসেছিল এই আড্ডার আসর। করোনার ঘোরলাগা সময়ের সমাপ্তি প্রত্যাশায় আড্ডা শুরু হয়। দুই ঘণ্টার এই আড্ডার আয়োজন করে তরুণ জীবপ্রযুক্তিবিদদের সংগঠন ‘নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এনওয়াইবিবি)’। সারা দেশ থেকে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী আড্ডায় যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। যাচাই–বাছাই শেষে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্যাথলজি ও জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ফায়ার। শুরুতেই বলেন, ১৯৮৬ সালে করা তাঁর একটি গবেষণা প্রকল্পের গল্প। সে বছর হালকা বেগুনি পেতুনিয়া ফুল গাঢ় বেগুনি রঙে রূপান্তর করতে গবেষণা করছিলেন অ্যান্ড্রু ফায়ার ও তাঁর দল। কিন্তু গাঢ় বেগুনি বর্ণের পেতুনিয়া ফুলের জায়গায় তাঁরা পেলেন সম্পূর্ণ সাদা পেতুনিয়া ফুলের জাত। সেই আবিষ্কার গবেষণা প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ পেলে বিজ্ঞান জগতে সাড়া পড়ে যায়। এর বছর চারেক পর অ্যান্ড্রু ফায়ার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ফিলিপ শার্প।
অ্যান্ড্রু ফায়ার পিএইচডির স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক ফিলিপ শার্পের কাছে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, কেন আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) বিভক্ত হয়ে যায়? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে “কেন” তা জানি না, তবে “কীভাবে” তা আমরা খুঁজে বের করতে পারি। সেই উত্তর গবেষণার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ গবেষণার ফলাফল প্রাণিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক শাখায় অবদান রাখছে। তাই গবেষণার সময় সব প্রশ্ন গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।’
তরুণ গবেষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অ্যান্ড্রুর পরামর্শ ছিল, ‘গবেষণায় সব সময় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না–ও আসতে পারে। তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কোনো কোনো গবেষণা প্রকল্পে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। ধৈর্য ধরে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইরিন গুলশান প্রশ্ন করেন, কীভাবে গবেষণার বিষয়বস্তু নির্বাচন করা যায়? অ্যান্ড্রু বলেন, আড্ডা থেকেই জন্ম নেয় বিভিন্ন ধারণা। তিনি তরুণ শিক্ষার্থী, গবেষক, শিক্ষক সবার সঙ্গেই কথা বলেন, গল্প করেন। এ থেকে চিন্তার খোরাক পান। এ ছাড়া নতুন নতুন আবিষ্কারগুলোও তাঁকে ভাবতে সাহায্য করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা শাওন জানতে চান—একজন সফল গবেষক হওয়ার ক্ষেত্রে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? অ্যান্ড্রু ফায়ার বলেন, গবেষণাপত্র প্রকাশনা গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাফল্যের মাপকাঠি নয়। গবেষণাপত্রের সংখ্যার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো গবেষণার মান ও সমাজে এর প্রভাব।
আলোচনায় নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানীর বিভিন্ন আবিষ্কার ও কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন এনওয়াইবিবির কর্মকর্তা মাহমুদা কবির, শাহাদাৎ হোসাইন, তাহসিন খান। আরও বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী হাসিনা খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও শিক্ষক মুশতাক ইবনে আয়ুব।