জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

দাবি মানতে তিন দিনের আলটিমেটাম শিক্ষার্থীদের

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আজ বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ
 ছবি: দীপু মালাকার

চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ এবং পুলিশের হাতে আটক শিক্ষার্থীদের আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে আজ সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করতে আসেন বিভিন্ন সরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের জন্য জড়ো হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ থেকে ১০ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।

এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানার ফটকের পাশে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সোয়া একটার দিকে পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এ সময় আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করতে দেখা যায়।

পুলিশের বাধার মুখে পড়া শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের উল্টো দিকের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। তখন তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে এসেছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাধা দিল। আমাদের ৩০-৪০ জনকে নুরুর (ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক) লোক বলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পুলিশ আটক করেছে। আমাদের নারী সহযোদ্ধাদেরও গায়ে হাত তোলা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, আমরা কোনো দল বা ব্যক্তির লোক নই। আমরা নিজেদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। আমাদের আটককৃত সহযোদ্ধাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আজ বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ

এরপর মিনিট পাঁচেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ সেখানেও পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা গিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেন৷ পরে বেলা ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের অন্যতম সিদ্ধেশ্বরী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এ কে আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বলেছিল যে আপনারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যান, রাস্তায় জটলা করবেন না। আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা রাস্তায় জটলা করব না, তো কোথায় করব, যেখানে একটা ন্যায্য দাবিতে আমাদের আন্দোলন। ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। আমরা চাই, তাঁদের এখনই নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলমান পরীক্ষাগুলোর যে নতুন রুটিন প্রকাশ করেছে, তা আমরা মানি না। আমরা মার্চের মধ্যে পরীক্ষা চাই। আমাদের দাবি না মানা হলে আগামী রোববার সারা দেশে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করব। আমাদের পরীক্ষাগুলো ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। সাত কলেজের চলমান পরীক্ষা নেওয়া গেলে আমাদেরগুলো কেন নেওয়া যাবে না?’

আল আমিন আরও বলেন, ‘আজকের মতো আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি। কিন্তু আমাদের আটক সহযোদ্ধাদের যদি আজকের মধ্যে না ছাড়া হয় এবং চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ করা না হয়, তাহলে রোববার সারা দেশব্যাপী আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেব।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি প্রথম আলোকে বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।