করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এক বছর ধরে বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও হলগুলোর পাঠাগার (রিডিং রুম)। দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি শুরু হয়েছে চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা। বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া চাকরিপ্রার্থীরাও।
এরই মধ্যে ঘনিয়ে এসেছে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। চলছে ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতিও। এই পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, যাঁরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগার ও হলের পাঠাগারে পড়ে অভ্যস্ত।
গ্রন্থাগার ও পাঠাগার বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন বাসা ও মেসে থেকে পড়াশোনার গতি কমেছে। বেড়েছে মানসিক চাপও।
সে কারণেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজেরাই চেয়ার–টেবিল নিয়ে চলে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের গ্রন্থাগারের বাইরে। বারান্দায় পাতা সেসব চেয়ার–টেবিলে বসেই গরমের মধ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা।
সোমবার শ দুয়েক শিক্ষার্থীকে সেখানে পড়তে দেখা গেছে। কারও চেয়ারের সঙ্গে টেবিল শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখা, যাতে চুরি না হয়ে যায়।
এখানে পড়তে আসা কামরুল হাসান এখন পর্যন্ত দুটি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, চাকরির জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়ার একটা পরিবেশ দরকার। কিন্তু মেসে সেই পরিবেশ নেই।
‘আমরা মূলত গ্রন্থাগার, রিডিং রুমে পড়ে অভ্যস্ত। করোনাকালে এসব বন্ধ। তাই আমরা একটু পড়ার পরিবেশ সন্ধান করে এখানে এসেছি’, প্রথম আলোকে বললেন কামরুল। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলতে আরও দুই মাস বাকি, তাই পড়ার বিকল্প পথ হিসেবে এ পথ বেছে নিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
আরেকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একা একা পড়াটা অনেক কঠিন। বাসায় থাকলে কিছুক্ষণ পর পর স্মার্টফোন (ব্যবহার) ও অন্যান্য সমস্যার কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে দিতে পারছিলেন না। যে কয়জন শুরুতে এখানে পড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে এই শিক্ষার্থীও একজন। তিনি বলেন, ‘মূলত বারান্দায় পড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম এই কারণে যে লকডাউনের কারণে বাসায় থাকতে থাকতে আমরা খুবই একঘেয়ে বোধ করছিলাম। পরে কয়েকজন এলাম শুরুতে।
আসতাম, গল্প করতাম, আড্ডা দিতাম। একা একা থাকলে আমরা খুবই মানসিক চাপে থাকি। দিন দিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। সেখান থেকেই শুরু। তারপর আস্তে আস্তে অনেকেই আসছে।’
সাব্বির আহমেদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই মেসে ভাড়া থাকেন। ৩৭তম বিসিএস থেকে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সাব্বির বলেন, ‘এখানে এলে পড়ার একটা গতি থাকে। সবাই এখানে পড়াশোনা করে। অনেকেই ভাইভা দেবে, অনেকেই চাকরি করে, তারাও পড়তে আসে। উৎসাহ কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের (ঢাবির) পরিবেশের সঙ্গে অন্য কোনো পরিবেশের তুলনা হয় না। সব মিলিয়ে এখানে পড়তে আসা।’
আরেকজন চাকরিপ্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বাসায় পড়লে অলসতা চলে আসে। লাইব্রেরিতে অনেকে আসেন, যাতে অলসতা কাজ না করে। এখানে এলে নিজের মনোবলটা ফিরে পাই। প্রতিযোগিতার একটা বিষয় আছে। নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যায়।’
এসব কারণেই তাঁরা গত বছরের নভেম্বর থেকেই নিজ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে বানিয়ে নিয়েছেন ‘নিজস্ব গ্রন্থাগার’।