ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভায় সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে কথা না বলায় কিছু শিক্ষকের তোপের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল৷ সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের পর গাড়িতে উঠতে গেলে ওই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন এই শিক্ষকনেতা৷
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভা হয়৷ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাবে কি না এবং চলমান সান্ধ্য কোর্সের ধরনে পরিবর্তন আসবে কি না, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এই দিন বেলা তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই সভা হয়৷ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্সের ভর্তি কার্যক্রম পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷
সভার প্রথম ঘণ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বাইরে রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়৷ পরের প্রায় ছয় ঘণ্টা সান্ধ্য কোর্সের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ সভায় সান্ধ্য কোর্স পর্যালোচনা ও যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে শিক্ষকেরা তর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ এই সভায় একটি সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত সান্ধ্য কোর্সের কার্যক্রম বন্ধ রাখার পক্ষে বক্তব্য দেন মাকসুদ কামাল৷
সভা শেষে নিজের কার্যালয়-সংলগ্ন লাউঞ্জে সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান৷ সেখানে এ এস এম মাকসুদ কামালও ছিলেন৷ সংবাদ সম্মেলন শেষে রাত সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠছিলেন এ এস এম মাকসুদ কামাল৷ এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন মৌখিকভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে মাকসুদ কামাল গাড়ি থেকে নামেন৷ তখন আরও ১৫-২০ জন শিক্ষক মাকসুদ কামালকে ঘিরে ধরেন৷
সান্ধ্য কোর্স ওই শিক্ষকেরা মাকসুদ কামালকে বলেন, ‘আপনি আমাদের নেতা৷ কিন্তু সভায় আমাদের পক্ষে আপনি কেন অবস্থান নেননি? আপনি এখনই আমাদের সঙ্গে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সান্ধ্যকোর্স নিয়ে কথা বলবেন৷’ মাকসুদ কামাল তাঁদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে যা করার, উপাচার্য তা-ই করবেন৷ উপাচার্য হলেন আপনাদের অভিভাবক৷’ তখন সেখানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা আ ক ম জামাল উদ্দিন মাকসুদ কামালের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নীল নকশা আঁকছেন৷ আপনার শিক্ষক সমিতি থেকে পদত্যাগ করা উচিত৷’
মোবাইলে এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে অনলাইন নিউজ পের্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রুবেলের ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই শিক্ষকেরা৷ পরে ঘটনাস্থলে থাকা দুজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক পরিস্থিতি শান্ত করেন৷
এ ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শিক্ষকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি৷ সেই হিসেবে তাঁরা যেকোনো অভাব-অভিযোগ আমাকে জানাতেই পারেন৷ একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে আমি বেরোনোর পর কয়েকজন শিক্ষক আমার কাছে এসে সান্ধ্য কোর্সের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চান৷ তাঁদের বক্তব্য শোনার পর আমি চলে যাই৷’