বছর ছয়েক আগের কথা। পাবনার বেড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সাত-আটজন শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নেয়, টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তা মানবকল্যাণে কাজে লাগাবে। সেই থেকে শুরু। এখন ওদের সদস্যসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। সবাই বেড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। অসহায় ও অবহেলিত মানুষের সহায়তার জন্য তারা সংগঠনের নাম দিয়েছে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’।
ছয় বছর ধরে সংগঠনের সদস্যরা অসহায় মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তাতে ওদের গল্প এখন স্থানীয় লোকজনের মুখে মুখে। শুরুতে শিক্ষার্থীরা টিফিনের জমানো টাকা ও স্কুলে যাওয়া-আসার রিকশাভাড়া বাঁচিয়ে অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তা করত। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে অনেক সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তি সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। ফলে কাজের পরিধি বড় হয়েছে আরও।
সংগঠনটি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসংক্রান্ত সহায়তা থেকে শুরু করে দুস্থদের পাশেও দাঁড়াচ্ছে নানাভাবে। অসহায়দের মধ্যে খাবার, চিকিৎসাসামগ্রী, শীতবস্ত্র বিতরণে বারবার উদ্যোগী হয়েছে এই সংগঠন।
করোনাকালে মানুষের দুরবস্থার সময় শিক্ষার্থীরা দরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। অসুস্থদের চিকিত্সার ব্যাপারে সহায়তা করেছে। উপজেলার বন্যাকবলিত বেশ কয়েকটি পরিবারেরও পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি ওষুধের দোকানের জন্য রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র, নেবুলাইজারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে দেওয়া হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া ও আফরা গ্রামের দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য নতুন দুটি আধপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সংগঠনের সদস্যরা। এ কাজে অর্থ, টিন, ইট, বালু সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করেছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার হৃদয়বান মানুষ।
সম্প্রতি আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা যেন করোনার টিকার জন্য নাম নিবন্ধন করতে পারেন, সে জন্য শিক্ষার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা করছে। নিবন্ধন থেকে শুরু করে টিকা কার্ড প্রিন্ট করে দেওয়া—সব কাজই করছে তারা। এতে এই অঞ্চলে টিকা গ্রহণের হার বেড়েছে।
শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের সভাপতি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মেহরাব হোসেন বলছিল, ‘টিফিনের টাকা জমিয়ে ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। মানবকল্যাণের বিষয়টি এভাবে সফলতার মুখ দেখবে, আমরা সত্যিই ভাবিনি।’
বেড়া বিতর্ক চর্চাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থানীয় স্কুলশিক্ষক ওমর সরকার বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগের কথা জানতে পেরে আগ্রহ নিয়ে আমি ওদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। এখন আমার মতো অনেকেই ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সবার সহায়তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু বেড়া উপজেলাতেই নয়, পার্শ্ববর্তী সাঁথিয়া উপজেলার অসহায় মানুষের জন্যও কাজ করছে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সবুর আলীও ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেছেন।