করোনার সংক্রমণরোধে এবং হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের অংশগ্রহণে ‘ম্যাস মাস্কিং ক্যাম্পেইন’ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে টেকসইভাবে মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ হ্রাস এ ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে চলা এই ক্যাম্পেইনে আরও অংশ নেয় ইনোভেশন ফর পোভার্টির অ্যাকশন (আইপিএ), ইয়েলে বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড মেডিকেল স্কুল, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য শক্তি ফাউন্ডেশন, ব্র্যাকের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিআইজিডি) এবং বিডি ক্লিন। অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই তার তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ইয়াং বাংলার মাধ্যমে ১০০ স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে জীবন রক্ষাকারী এই ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করছে।
এ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আয়োজিত প্রথম মিটিংয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার ঝুঁকির মধ্যে আমাদের জীবনব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত, তা শেখা এখন গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে মাস্ক পরা এ ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমি অনেক মানুষের সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি সচেতনতা ক্যাম্পেইন আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত।’
সিআরআই নিজের ফেসবুক পেজে জানায়, মহামারির শুরু থেকেই সিআরআই তার তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম ইয়াং বাংলার স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা মানুষগুলোকে সচেতন করে তুলতে এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। এবারও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে ডিএনসিসির এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে রয়েছে ইয়াং বাংলা।
এ মাস্ক ক্যাম্পেইনটি মূলত এনওআরএম বা ‘নর্ম’ মডেল অনুসরণ করে আয়োজিত হচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য মাস্ক পরিধান করাকে সবার জীবনের অংশ করে নেওয়া। স্থানীয় এনজিও গ্রিন ভয়েসের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলকভাবে মডেলটি তৈরি করেছে ইয়েলে বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইপিএ।
দেশের ৬০০ ইউনিয়নের ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বিগত চার মাসে সম্পন্ন করা হয়েছে এ এনওআরএম (নর্ম) গবেষণা কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফ্রি মাস্ক সরবরাহ, মাস্ক পরিধানের গুরুত্ববিষয়ক তথ্য সরবরাহ, পাবলিক পরিবেশে সবাইকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা এবং জনপ্রিয় নেতৃত্বের কাছ থেকে সচেতনতা সৃষ্টি।
এ ‘নর্ম’ মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসইভাবে মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়ানো সম্ভব, যা ক্যাম্পেইন শেষ করার ১০ সপ্তাহ পরও কার্যকর থাকছে। ঢাকার পরিস্থিতি এই ক্যাম্পেইন মডেলকে ব্যবহার করছে ডিএনসিসি।
ইয়েলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মুশফিক মোবারক বলেন, ‘নিয়মিত মাস্ক পরার প্রবণতা তৈরি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর বাংলাদেশ এ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি মডেল উদ্ভাবন করেছে, যা মাস্ক তৈরির প্রবণতা দ্রুত বাড়াতে সক্ষম এবং বর্তমানে এই মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলে। আসন্ন ঈদের আগে ঢাকায় ডিএনসিসি মেয়রের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা দ্রুত সময়ে এই মডেল কার্যকর করতে পারব বলে আশা করছি।’
সিআরআই-এর পলিসি ম্যাগাজিন হোয়াইটবোর্ডের ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘কোভিড-১ রিকোভারি অ্যান্ড রিইমেজিং’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইপিএর এ গবেষণার প্রাথমিক কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়, যার সূত্র ধরে সিআরআইয়ের সিনিয়র অ্যানালিস্ট মোফিজ কামাল বলেন, ‘সব দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যেও একটি বিষয় নিশ্চিত যে নিয়মিত মাস্কের ব্যবহার এবং টিকা গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল এই করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই সম্ভব। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সিআরআইয়ের ইয়াং বাংলা মাঠপর্যায়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেও সমর্থন পাচ্ছে।’
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন শপিং মল, মার্কেট এবং যাত্রা পথে ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সে কারণেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮টি জনবহুল এলাকায় ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা তৈরির জন্য এই ‘নর্ম’ মডেলে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে।
শক্তি ফাউন্ডেশনের উপনির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, যতটুকু অনুমান করা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ ভবিষ্যতেও আমাদের সঙ্গেই থাকছে। আর সে কারণেই আমাদের নিত্য কার্যক্রম ও অর্থনীতিকে সচল রাখতে এমন পলিসি গ্রহণ করতে হবে, যার মাধ্যমে কোভিডের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লাখের বেশি নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য শক্তি ফাউন্ডেশন সচেতনতা কার্যক্রম, বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ, হটলাইন থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে।
শক্তি ফাউন্ডেশন এমন একটি ক্যাম্পেইনের অংশ হতে পেরে গর্বিত।
এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সংখ্যাগত ও গুণগত পর্যবেক্ষণ পাওয়া সম্ভব। দৈনিক মাঠপর্যায় থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ সম্ভব, যার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এ ক্যাম্পেইন আরও কার্যকর হয়ে উঠবে।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, নগরগুলোর মতো ঘনবসতিপূর্ণ, দ্রুত পরিবর্তনশীল জটিল জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে দ্রুত সেখানকার পরিস্থিতি বুঝতে পারাটাও জরুরি। আর সে কারণে এমন একটি ক্যাম্পেইনের সঙ্গে থেকে তথ্য লাভ করতে পেরে বিজিআইডি গর্বিত।
করোনা মহামারিকালে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেন না বাড়ে, সেই লক্ষ্যে এ ক্যাম্পেইন গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, যেখানে ইয়াং বাংলার তত্ত্বাবধানে অংশ নিচ্ছেন ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক। ভবিষ্যতে এ মডেল কার্যকর হলে দেশের আরও বিভিন্ন নগরে তার প্রয়োগ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিজ্ঞপ্তি