করোনা সারা পৃথিবীতেই একটা বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনলাইনে মানুষ এখন একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি যুক্ত—এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। দুই বছর আগেও যিনি ‘জুম’ সফটওয়্যারটির নাম জানতেন না, এখন তিনিও জুম ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং সেরে নিচ্ছেন। অফিসে না গিয়েও যে ‘অফিস করা’ যায়, তা-ও তো আমরা জেনেছি এই করোনাকালেই।
কিন্তু তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড় খবর হলো—পৃথিবীর বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন ‘রিমোট হায়ারিং’ করছে। অর্থাৎ আগে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাইলে সে দেশের ভিসা, জব পারমিট, ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হতো। এরপর চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হতো। এখন সেসব ঝক্কি ছাড়াই অনলাইনে মানুষ ইন্টারভিউ দিচ্ছে, এমনকি ঘরে বসে কাজও শুরু করে দিচ্ছে। মাস শেষে বেতনও আসছে ডলারে।
ভাবা যায়? যদি প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারি, কত বিশাল সুযোগ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!
একটা সময় ছিল, কোনো কিছু শিখতে হলে নীলক্ষেত যেতে হতো সেই বিষয়ের বইয়ের খোঁজে। বই পাওয়া যাবে কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। অনেক সময় কিনতে হতো একাধিক বই। আবার অনেক বই ‘আউটডেটেড’ হয়ে যেত খুব তাড়াতাড়ি (বিশেষ করে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বইগুলো)। ফলে বই কিনেও স্বস্তি পাওয়া যেত না। আর বই কেনার নানা হ্যাপা তো আছেই।
সেই ঝামেলা এখন আর নেই। ইউটিউব নিজেই এখন শেখার এক বিশাল ভান্ডার। পৃথিবীর প্রায় যেকোনো বিষয়ে ইউটিউবে পাওয়া যাবে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও চ্যানেল। প্রয়োজন শুধু খুঁজে নিয়ে সেগুলোর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার।
পাশাপাশি আছে অসংখ্য বিষয়ে প্রফেশনাল অনলাইন কোর্স। ইউডেমি, কোর্সেরা, ইউডাসিটিতে গিয়ে পছন্দমতো যেকোনো বিষয়ের কোর্স সাবস্ক্রাইব করে নেওয়া যাবে। কিছু কিছু কোর্স করতে টাকা লাগে, আবার বিনা মূল্যেও কিছু কোর্স করার সুযোগ পাবেন আপনি। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশেও তো এমন একাধিক প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। স্থানীয় অনলাইন পেমেন্ট সেবা (যেমন বিকাশ বা নগদ) ব্যবহার করেও আপনি কোনো কোর্সে যুক্ত হতে পারেন।
এ কোর্সগুলো কিনে শিখতে গেলে অবশ্যই কিছু খরচ হবে। তবে কোর্স কিনে পড়ার একটা সুবিধা কিন্তু আছে। সেটি হচ্ছে, সিরিয়াস থাকা যায়। কারণ, টাকা দিয়ে কিছু কিনলে আমরা সাধারণত সেটা বিফলে যেতে দিই না।
আজকাল যেহেতু অনলাইনের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে অনেক। সুতরাং সে বিষয়েই দক্ষতা গড়ে তোলা ভালো, যেগুলো শিখে ঘরে বসে কাজ করা যাবে। শেখা যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং কোর্স। গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, কপিরাইটিং, ব্লগিং, ভিডিও সম্পাদনা, অ্যানিমেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ছবি তোলা, ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস) ডিজাইনসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ আছে।
তবে শুধু শেখাটাই মূল বিষয় নয়। শেখার পাশাপাশি সেটি চর্চা করা কিন্তু ভীষণ জরুরি। না হলে বাস্তবিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে উঠবে না। প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আসলে সেই দক্ষতাই চায়, যেটি তাদের ব্যবসায় সত্যিকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজে লাগবে।
সে জন্য কোনো একটি বিষয়ে প্রাথমিক দক্ষতা অর্জনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ খোঁজা যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো সে জন্য টাকাপয়সা পাওয়া যাবে না। কিন্তু যেটি পাওয়া যাবে, সেটি হলো সত্যিকার কাজের অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা কিন্তু অমূল্য।
আজকাল প্রচুর স্টার্টআপ হচ্ছে চারদিকে, যাঁরা উদ্ভাবনী উপায়ে কোনো সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নতুন ধরনের ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। স্টার্টআপগুলোর সাধারণত শুরুর দিকে আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকে। কাজেই যদি তাদের সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাহলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আগে একাডেমিক পড়ালেখা শেষ হোক, তারপর নাহয় দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাবে—এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। প্রতিদিন পড়াশোনার পাশাপাশি অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় দিতে পারেন নিজের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য। আশা করি পড়ালেখা শেষে কাজ খোঁজা নিয়ে আপনাকে আর মাথা ঘামাতে হবে না।