কীভাবে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের চর্চা করব

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য হোয়ার্টন স্কুল অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক কেটি মিল্কম্যান। ‘বিহেভিয়ার চেঞ্জ ফর গুড ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। সম্প্রতি হাউ টু চেঞ্জ নামে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। টাইম ডটকমে কেটি মিল্কম্যান লিখেছেন কীভাবে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হয়।

কেটি মিল্কম্যান

রেস্তোরাঁ, ব্যায়ামাগার, অফিসগুলো খুলতে শুরু করার পর থেকেই অনেকে আমাকে প্রশ্ন করছে—মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে কীভাবে আমরা কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের চর্চা করতে পারি? একটা নতুন শুরু কীভাবে ঘরে–বাইরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, সেটি আমার গবেষণার বিষয়।

মানুষের আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার পেছনে আমি আমার একাডেমিক ক্যারিয়ার উৎসর্গ করেছি। পরিস্থিতির সঙ্গে বেমানান কৌশলের কারণে কীভাবে মানুষ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, সে অন্বেষণ দিয়েই হয়েছিল কাজের শুরু। আমি জেনেছি, উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া কিংবা নিজেকে একটা সফল জায়গায় কল্পনা করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু সামনের বাধাগুলোর কথা ভেবে কৌশল ঠিক করলে এগোনো আরও সহজ হয়।

লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার সবচেয়ে চেনা কারণ হলো কোনো না কোনো প্রলোভনে পড়ে যাওয়া। আমরা জিমে যেতে চাই, কিন্তু নেটফ্লিক্স ইশারায় ডাকে। আমি জানি, আমার একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে, কিন্তু ফেসবুক স্ক্রল করাটাই বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। মনোবিদ আয়ালাট ফিশবাহ ও কেইটলিন য়ুলে আমাদের দেখিয়েছেন, লক্ষ্য অর্জনের মাঝপথে প্রলোভন এসে পড়লে বেশির ভাগ মানুষ একটা ভুল করে বসে—দীর্ঘ মেয়াদে কোনটা কাজে আসবে, সেটা ভাবতে শুরু করে। কিন্তু কোনো লক্ষ্য অর্জনের আরও সফল উপায় হলো দূরে না তাকিয়ে বর্তমানকে উপভোগের চেষ্টা করা।

একাধিক গবেষণায় ফিশবাহ ও য়ুলে দুই দল মানুষকে নিয়ে কাজ করেছেন। এক দলকে বলা হয়েছে, ‘যে স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়াম তুমি উপভোগ করো, সেগুলো বেছে নাও।’ আরেক দলকে বলা হয়েছে, ‘যে খাবার ও ব্যায়াম তোমার জন্য সবচেয়ে উপকারী, সেগুলো বেছে নাও।’ এ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম দলটিই তুলনামূলক ভালো ফল পাচ্ছে। গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রলোভনকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করি। উপেক্ষা না করে বরং একে কাজে লাগানো উচিত।

একটা ভালো উপায় হলো অপছন্দের কিন্তু প্রয়োজনীয় অভ্যাসটির সঙ্গে কোনো একটি পছন্দের কাজ জুড়ে দেওয়া। যেমন ব্যায়াম করতে করতে টিভিতে প্রিয় অনুষ্ঠান দেখা। স্কুলে এ পদ্ধতি আরও কার্যকর। যেমন লাইব্রেরিতে যাওয়া-আসার পথে পছন্দের স্ন্যাকস খাওয়া। পছন্দের পডকাস্ট শুনতে শুনতে ঘরদোরের কাজ করা। এমনকি সম্পর্কের উন্নয়নের জন্যও এই পদ্ধতি কাজে লাগানো যায়। কারও সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা থাকলে প্রিয় রেস্তোরাঁয় বসে খেতে খেতে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে নিতে পারেন।

তবে এ-ও ঠিক, অনেক অভ্যাস আমরা গড়ে তুলতে পারি না স্রেফ ভুলে যাই বলে। এমন নয় যে আমরা সেটা পছন্দ করি না। ‘উপভোগ করা’র কৌশল এখানে খাটবে না।

মনোবিদ পিটার গোলউইটজার মনে করেন, লক্ষ্যে পৌঁছাতে গিয়ে মানুষ ‘কখন করা উচিত’, তা না ভেবে ‘কী করা উচিত’, সেটির ওপর বেশি জোর দিয়ে ফেলে। এ সমস্যা দূর করার জন্য যা করা দরকার, তা হলো প্রয়োজনীয় কাজটির সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট সময়, জায়গা বা ঘটনাকে জুড়ে দিতে হবে।

এটা শূন্যস্থান পূরণের মতোই সহজ। যখন...হবে, তখন আমি...করব। আমি আমার মাসিক সঞ্চয় বাড়াব—এ পরিকল্পনার মধ্যে ঘাটতি আছে। কিন্তু যদি বলি, যখনই আমার বেতন বাড়বে, আমি আমার মাসিক সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়াব, তাহলে পরিকল্পনাটি আরও জোরালো হয়।

ছোট ছোট ব্যর্থতার কারণে মানুষ লক্ষ্য অর্জনে নিরুৎসাহী হয়ে যায়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমার সহকর্মী মেরিসা শেরিফ ভাবছেন, প্রতিদিন সকালে দৌড়াবেন। কিন্তু একজন ‘আচরণবিজ্ঞানী’ হিসেবে মেরিসা জানেন, এক দিন জগিংয়ে না গেলেই পরপর কয়েক দিন যাওয়া হয় না। একে বলা হয় ‘হোয়াট দ্য হেল ইফেক্ট’। ধরুন, একদিন আপনি আপনার পরিকল্পিত ডায়েটের তুলনায় অল্প কিছু ক্যালরি বেশি গ্রহণ করে ফেললেন। দেখা যাবে এই মনঃকষ্টে আপনি একটা আস্ত অ্যাপল পাই খেয়ে ফেলেছেন।

এমন ঝুঁকিতে না পড়ার জন্য মেরিসা একটা বুদ্ধিদীপ্ত উপায় বের করেছেন। তিনি ঠিক করেই রেখেছেন, জরুরি কোনো পরিস্থিতিতে সপ্তাহে দুদিন জগিং বাদ দেওয়া যাবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো দিন জগিং বাদ পড়লে তিনি সেটাকে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাতারে ফেলে দেন। এভাবে তিনি ভালো ফল পেয়েছেন। (সংক্ষেপিত)

ইংরেজি থেকে অনুদিত