বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস পেলেন নিউজিল্যান্ডের ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার। নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নিজ উদ্যোগে হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে এ পুরস্কার জিতে নেন দেশটির ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শ্যামল দাস।
নিউজিল্যান্ডে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলার সময় ইথানলকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে হ্যান্ডস্যানিটাইজার বানান ড. শ্যামল দাসের নেতৃত্বে ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডস্যানিটাইজার বানানো নিয়ে সেই সময়ই গণমাধ্যমে এটা নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। প্রায় ১ হাজার ২০০ লিটার হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়ান এই বাংলাদেশি। এবার তাঁর সেই উদ্যোগের প্রশংসা করল নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। পেলেন ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার।
নিউজিল্যান্ডের কিউই ব্যাংক প্রতিবছর ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার দিয়ে থাকে। নিউজিল্যান্ড প্রতিবছর ছয়টি ক্যাটাগরিতে নিউজিল্যান্ডার অব দ ইয়ার পুরস্কার দিয়ে থাকে। সেই ছয়টি ক্যাটাগরির একটি হলো ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার।
গত ২৩ ডিসেম্বর ডানেডিনের কিউই ব্যাংকের লোকাল ম্যানেজার ম্যারি সুটোন ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার তুলে দেন ড. শ্যামল দাসের হাতে। করোনার কারণে এ বছর সবাইকে একত্র করে একসঙ্গে পুরস্কার দেওয়ার পরিবর্তে প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্মানিত করা হয় পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের।
নিউজিল্যান্ডে লকডাউনের সময় যখন সবাই ছিলেন বাসায় বন্দী, তখন ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় অনুমতি নিয়ে ড. শ্যামল দাসের নেতৃত্বের দলটি তৈরি করে হ্যান্ডস্যানিটাইজার। এ সময় মোট ১ হাজার ২০০ লিটার হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরি করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মিটিয়ে নিউজিল্যান্ড পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য অপরিহার্য কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করেন।
নিউজিল্যান্ডে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর করোনায় কোনো প্রাণহানি ঘটার আগেই ২৫ মার্চ দেশটিতে লকডাউন জারি করা হয়। নিউজিল্যান্ডে সাত সপ্তাহ অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হয় লকডাউন। আর করোনা প্রাদুর্ভাব চলাকালে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল দেশটিতে। এখন অনেকটাই করোনামুক্ত নিউজিল্যান্ড। ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৭২ জন। মারা গেছেন মাত্র ২৫ জন।
করোনার সময়ে হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরি করে কিউইদের সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিঠিও দিয়েছেন ড. শ্যামল দাসকে। আর ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার প্রাপ্তির পর ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারলিন হায়েন এক চিঠিতে ড. শ্যামল দাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘আপনার ও আপনার ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গর্বিত।’
ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে পিএইচডি শেষ করে মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর গবেষণা ফেলো হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৩ সালের জুলাইতে নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে যোগ দেন ড. শ্যামল দাস। অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ফেলো হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। এর আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে ফার্মেসিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।
* লেখক: মু. মাহবুবুর রহমান, পিএইচডি গবেষক, মেসি ইউনিভার্সিটি, নিউজিল্যান্ড