কম্পিউটারবিজ্ঞানে পড়াই জীবনের টার্নিং পয়েন্ট: অধ্যাপক লাফিফা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক লাফিফা জামাল। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি, একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটিরও একজন সদস্য। স্নাতকোত্তরের থিসিস ভাইভার পরদিন সাক্ষাৎকার দিয়ে একটি আমেরিকান ডেটা মাইনিং প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অফিসে চাকরি নেন লাফিফা জামাল। পরে সেটি ছেড়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে আপনার দেখা ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো কী কী?

লাফিফা জামাল: তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা ঘুচিয়ে বাংলাদেশে কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি হচ্ছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে, শিক্ষা খাতে আমরা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি এবং নারীর ক্ষমতায়নে কিন্তু দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো করছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিতে আমাদের অনেক বেশি উৎকর্ষ সাধন হয়েছে।

প্রশ্ন

তরুণদের প্রতি কী প্রত্যাশা করছেন?

লাফিফা জামাল: তরুণদের প্রতি আমি একটা কথাই বলতে চাই। কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। নিজের কাজকে ভালোবেসে করতে হবে। কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। এবং আমরা যখন আমাদের কাজটাকে যথাযথভাবে পালন করব, তখনই কিন্তু আমরা আমাদের দেশকে ভালোভাবে ভালোবাসতে পারব এবং নিজেরও দেশের উন্নতি হবে। যারা যে অবস্থানেই আছে, সেই অবস্থাতেই দেশকে ভালোবাসতে হবে। ভালোবেসে কাজ করতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। স্বপ্ন সবার থাকে যে আমরা অনেক ভালো করব। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে কয়জন। যে অনেক পরিশ্রম করে, নিজের স্বপ্নের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে এবং বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, তারাই কিন্তু পরবর্তী সময়ে সফল হতে পারে।

প্রশ্ন

নারী বলে কি কোনো বাধা এসেছে আপনার?

লাফিফা জামাল: নারী হিসেবে আমি পরিবার থেকে কোনো বাধা পাইনি। সে জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। বিয়ের আগে জীবন ও বিয়ের পরের জীবনে আমি দুই পরিবারের কাছ থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সব নারী এ সুবিধা পায় না। অনেক নারীর ক্ষেত্রে পরিবার থেকেও বাধা আছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। আমরা যদি কর্মক্ষেত্রের কথা চিন্তা করি, তাহলে বলব আমি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আছি, সে ক্ষেত্রে সেভাবে কোনো বাধা পেতে হয়নি। তবে যখন সহকর্মীকে সহকর্মী হিসেবে চিন্তা না করে একজন নারী কর্মী হিসেবে চিন্তা করি, তখনই কিন্তু সে সমস্যাগুলো দেখা যায়। তবে সুখের কথা বলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক কিছু বদল হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে। নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে। আগের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান বেশ ভালো হচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্র অনেক বেশি নারীবান্ধব হচ্ছে।

প্রশ্ন

সাফল্যের গোপন রহস্য কী?

লাফিফা জামাল: সাফল্যের গোপন রহস্য বলতে কিন্তু আসলে কিছু নেই। যে যে ক্ষেত্রেই কাজ করি না কেন, আমরা যদি যার যার ক্ষেত্রে সফল হতে চাই, তাহলে কঠোর পরিশ্রমের কিন্তু কোনো বিকল্প নেই। শর্টকাটে কিন্তু আমরা কোনো কিছু অর্জন করতে পারি না। যদি কিছু অর্জন করে ফেলি, সেটা কিন্তু বেশি দিন টিকে থাকবে না। তাই কর্মক্ষেত্র বা নিজের জীবনে সফল হতে হলে অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম, কাজের প্রতি ডেডিকেশন, কমিটমেন্ট যদি থাকে, তাহলে সাফল্য ধরা দেবে।

প্রশ্ন

আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোনটি?

লাফিফা জামাল: আমি যে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি, তখন আমরা প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি মনে করি, সে সময় কম্পিউটারবিজ্ঞানে পড়া আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তখন কম্পিউটারবিজ্ঞান একেবারে নতুন বিষয়। তখন মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে। সে সময় কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পড়াটা আমার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট। এ ছাড়া আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপারসন হই, এটাও আমার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট।