কমনওয়েলথ বৃত্তির পরিচিতি
কীভাবে জানবেন বৃত্তির তথ্য
www.cscuk.dfid.gov.uk
কমনওয়েলথ বৃত্তি–সংক্রান্ত বেশির ভাগ তথ্য পাওয়া যাবে এই অফিশিয়াল ওয়েবপেজে
www.ugc.gov.bd
প্রতিটি দেশের জন্য পৃথক মনোনীত প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত আছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি হলো আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রতিবছর ইউজিসি কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করে। যে কেউ ইউজিসির ওয়েবসাইট থেকে বৃত্তিসংক্রান্ত সার্কুলার দেখতে পারেন।
www.scholars4dev.com
ই–মেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে চাইলে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারেন। তাহলে আপনার ই-মেইলেই সময়মতো বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে যাবে।
www.britishcouncil.org.bd
এ ছাড়াও কমনওয়েলথ বৃত্তি সংক্রান্ত নানা তথ্য পাওয়া যাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে। ফেসবুক পেজেও হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়।
বৃত্তির ধরন
উন্মুক্ত (ওপেন)
শর্তপূরণ সাপেক্ষে যে কেউ আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশে আবেদন করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে।
স্টাফ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন সহযোগী) কর্মরত কর্মীদের (স্টাফ) জন্য প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠান থেকেই যাচাই–বাছাই করে কয়েকজনের নাম ইউজিসির কাছে প্রস্তাব করা হয়।
শেয়ারড
শেয়ারড স্কলারশিপের ক্ষেত্রে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন না করে সরাসরি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, সে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয় এবং কমনওয়েলথ শেয়ারড স্কলারশিপের অধীনে অর্থায়ন পেতে ইচ্ছুক বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাতে হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় যাচাই–বাছাই করে কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালয়কে জানিয়ে দেয়।
কারা আবেদন করতে পারবেন
ক. কমনওয়েলথভুক্ত যেকোনো দেশের নাগরিকের জন্যই এই বৃত্তির দরজা খোলা। তবে মেধাবী তরুণ ও পেশাজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিশেষ করে যাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, পাবলিক সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
খ. আবেদনকারীর কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির (২:১) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর থাকতে হবে, যা সিজিপিএ ৩.০–এর সমতুল্য। তবে সিজিপিএ যত বেশি হবে, বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
গ. যাঁরা আগে বিদেশে থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন, তাঁরা স্নাতকোত্তরের জন্য বিবেচিত হবেন না। তবে অন্য কোনো বৃত্তির অধীনে স্নাতকোত্তর করে থাকলে পিএইচডিতে আবেদন করতে পারবেন।
ঘ. দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে পিএইচডির জন্য নিবন্ধন করলে বৃত্তির জন্য বিবেচিত হবেন না।
ঙ. কমনওয়েলথভুক্ত বা নিজ দেশের বাইরে অবস্থানকালে কেউ আবেদন করলে গ্রহণযোগ্য হবেন না।
চ. যুক্তরাজ্যে কেউ শিক্ষারত অবস্থায় এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হবেন না।
ছ. উচ্চশিক্ষা শেষে অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত আসতে হবে।
কমনওয়েলথ বৃত্তির আর্থিক সুবিধা
১. স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির সম্পূর্ণ টিউশন ফি বহন করবে কমনওয়লেথ কমিশন
২. যুক্তরাজ্যে যাওয়া–আসার বিমানের টিকিট।
৩. লন্ডনের বাইরে থাকলে মাসিক ভাতা হিসেবে দেওয়া হয় ১ হাজার ৮৬ পাউন্ড বা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। লন্ডনের ভেতরে থাকলে ভাতার পরিমাণ ১ হাজার ৩৩০ পাউন্ড বা ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
৪. মাসিক ভাতার বাইরেও এককালীন ৪২১ পাউন্ড (প্রায় ৪৬ হাজার টাকা) পাওয়া যাবে।
৫. ‘স্টাডি ট্রাভেল গ্র্যান্ট’ হিসেবে ২০০ পাউন্ড বা প্রায় ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
৬ ‘থিসিস গ্র্যান্ট’ হিসেবে দেওয়া হয় ২২৫ পাউন্ড বা প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
৭. এ ছাড়া কমনওয়েলথ কমিশন কর্তৃক আয়োজিত যেকোনো প্রশিক্ষণ, স্বল্পমেয়াদি কোর্স, ওয়েলকাম ইভেন্ট ও আঞ্চলিক সম্মেলন যোগদানের জন্য ট্রেনের টিকিট, থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়।
(এখানে সুযোগ–সুবিধাগুলো দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের নিয়ম অনুযায়ী)
আরও কিছু বৃত্তি
যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট স্কলার প্রোগ্রাম
অস্ট্রেলিয়ার অস্ট্রেলিয়ান অ্যাওয়ার্ড, এনডেভার (Endeavour), আইপিআরএস (IPRS)
জাপানের মনবুকাগাকুশো (Monbukagakusho)
জার্মানির ডিএএডি (DAAD)
ইউরোপের ইরাসমাস–মুন্ডাস (Erasmus-Mundus)
আবেদনের বিভিন্ন পর্যায়
১.
উন্মুক্তর ক্ষেত্রে ইউজিসির ওয়েবসাইট থেকে আবেদনের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের (যদি থাকে) গ্রুপ/ বিষয়, পাসের বছর, মোট নম্বর/জিপিএ/সিজিপিএ ও প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার উল্লেখ করে সত্যায়িত সনদ, ট্রান্সক্রিপ্টসহ জমা দিতে হবে। এ ছাড়া আবেদনকারীর যদি কোনো প্রকাশনা থাকে, তার বর্ণনা, আইইএলটিএস স্কোর (যদি থাকে) ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করে এই ঠিকানায় পাঠাতে হবে: বরাবর, সচিব, উচ্চ শিক্ষা কমিশন, আগারগাঁও প্রশাসনিক ভবন এলাকা, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭।
যাচাই বাছাই করে আবেদনের ২-৪ সপ্তাহ পর সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকবে ইউজিসি। পরে একাডেমিক ফলাফল, প্রকাশনার সংখ্যা ও গুণগত মান এবং সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক নির্বাচন করা হয়, যা সরাসরি কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালায়ে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, স্নাতকোত্তরের জন্য প্রকাশনা থাকা বাধ্যতামূলক নয়, তবে পিএইচডির জন্য থাকা বাঞ্ছনীয়।২.
দ্বিতীয় পর্যায়ে, কমনওয়েলথ কমিশন সচিবালয় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ই-মেইলের মাধ্যমে ‘অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম’ এ আবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এ পর্যায়ে একজন দরখাস্তকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, একাডেমিক অ্যাওয়ার্ড ও স্বীকৃতি, প্রকাশনার বিবরণ, পেশাগত অভিজ্ঞতা, একাডেমিক বা পেশাগত প্রশিক্ষণ/শর্টকোর্সের বিবরণ, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বলে রাখা ভালো, একজন আবেদনকারীর অনেক বিষয়ের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া আবেদনকারীকে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল থেকে তিনটি ‘রেফারেন্স লেটার’ (সুপারিশপত্র) সংগ্রহ করতে হয়।৩.
এই পর্যায়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যার ওপর ভিত্তি করে ‘চূড়ান্ত নির্বাচন’ করা হয়। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণার পর থেকে ৬টি থিমের ওপর কমনওয়েলথ বৃত্তির দরখাস্ত আহ্বান করা হয়ে থাকে।
ক. উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
খ. স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নতকরণ ও সামর্থ্য বাড়ানো
গ. বৈশ্বিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধিসাধন
ঘ. বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ
ঙ. স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ ও সংকট মোকাবিলা
চ. অভিগমন, অন্তর্ভুক্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা
এই ৬টি থিমের যেকোনো একটি বা দুটির ওপর ভিত্তি করে এক হাজার থেকে দেড় হাজার শব্দের তিনটি রচনা লিখতে হয়। রচনার বিষয় হলো:
ক. পড়ালেখার বিশদ পরিকল্পনা: এটি মূলত আবেদনকারী যে বিষয় নিয়ে পড়তে চান, তার বিস্তারিত বিবরণ। যেমন কেন তিনি এই বিষয়ের ওপর পড়তে চান? কীভাবে এই বিষয়ের ওপর পড়াশোনা তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীকে তাঁর পছন্দের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও তিনটি প্রোগ্রাম/বিষয়ের নাম ক্রমানুসারে উল্লেখ করতে হয়, যা থেকে পরবর্তী সময়ে কমনওয়েলথ কমিশন উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী আবেদনকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
খ. নিজ দেশের উপযোগিতা/সুবিধা: এখানে শিক্ষার্থীকে বলতে হয়, কীভাবে তাঁর কাঙ্ক্ষিত উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে তাঁর নিজ দেশ উপকৃত হবে বা তিনি কীভাবে বিদেশে অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতাকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগাবেন।
গ. ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা: এ পর্যায়ে আবেদনকারীকে তাঁর পরবর্তী ৫-১০ বছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরতে হয়। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কী ধরনের প্রতিষ্ঠান বা কাজের সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন এবং তাঁর জ্ঞানলব্ধ অভিজ্ঞতা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করবেন, তা জানাতে হয়।