আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক নবম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য দিনব্যাপী রাখা হয় বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। বিকেলে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় জাতীয় পর্বের আয়োজনের। স্কুল অলিম্পিয়াড এবং আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ী প্রায় পাঁচ শ শিক্ষার্থী অংশ নেয় জাতীয় পর্বে।
সকাল আটটায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে প্রবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্বের এ আয়োজন শুরু হয়। এরপর জাতীয় অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা পর্ব ৯টার দিকে শুরু হয়। অলিম্পিয়াডে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান হতে ২টি করে ৬টি ছোট সমস্যা এবং বড় সমস্যা তিন বিষয়ে ভাগ করে সমাধান করতে দেওয়া হয়।
অলিম্পিয়াড শেষে অংশগ্রহণকারী খুদে বিজ্ঞানীদের জন্য রাখা হয় বিজ্ঞান জাদুঘরের আয়োজনে বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজে বিজয়ীদের দেওয়া হয় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা পুরস্কার। এরপর শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর বিনা মূল্যে ভ্রমণের সুযোগ। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর ভ্রমণ শেষে থাকে ভ্রাম্যমাণ সিক্স-ডি মুভি প্রদর্শনী। দুপুরের খাবার গ্রহণের পর শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় রোবট শো। সঙ্গে থাকে বিজ্ঞানবিষয়ক মুক্ত আলোচনা এবং রোবট নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব।
এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রশ্নোত্তর পর্বে সব কটি প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল ‘ব্ল্যাকহোল যদি দেখা না যায়, তাহলে আমরা ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলি কীভাবে?’ উত্তরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আসলে আমরা ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলি না। ব্ল্যাকহোল দেখিও না। ব্ল্যাকহোলের আশপাশের বস্তু থেকে ব্ল্যাকহোলের ধারণা নিই।’
সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা সাহিত্য নিয়েও নানা প্রশ্ন করে। সাহিত্য নিয়ে অধীর আগ্রহ দেখে জাফর ইকবাল হেসে বলেন, ‘এবারের অলিম্পিয়াডের নাম সাহিত্য অলিম্পিয়াড দিলেই ভালো হতো।’
বিকেল চারটায় শুরু হয় আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৯ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহসভাপতি মুনির হাসান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নোভা আহমেদ, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির আহমেদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক এ কে এম লুৎফুর রহমান সিদ্দীক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুশতাক ইবনে আয়ুব।
মুশতাক ইবনে আয়ুব বলেন, ‘বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে হলে দুটি গুণের দরকার। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং উদার মন। তোমাদের মধ্যে এই গুণগুলো চর্চা করতে হবে।’ আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ বলেন, ‘জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে বিজ্ঞানে আগ্রহ বাড়ছে এ নিয়ে আমরা গর্বিত।’
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমি এখানে বাচ্চাদের করা ডার্ক ম্যাটার, মাইক্রোপ্রসেসর, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে করা প্রশ্ন নিয়ে অভিভূত। যদিও আমি বাণিজ্যের ছাত্র। এমন আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরে আমার খুবই আনন্দ লাগছে। ভবিষ্যতেও আমরা এমন আয়োজনের সঙ্গে থাকব।’
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক এ কে এম লুৎফুর রহমান সিদ্দীক বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পাশে আছি এবং সহযোগিতায় রয়েছে আমাদের মুভি বাসসহ নানা অনুষঙ্গ।’
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, ‘এবারের ব্যাংকক আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন খুবই টাফ হবে। এবারের আইজেএসও আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। এ জন্য আমাদের খুবই কৌশলী হতে হবে।’
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহসভাপতি মুনির হাসান সমাপনী বক্তব্যে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, মানুষের সঙ্গে পশুপাখির পার্থক্য কী? শিক্ষার্থীরা একের পর এক বলে যাচ্ছিল, বুদ্ধি, বিবেক, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ইত্যাদি। উত্তরে তিনি বলেন, ‘মানুষ বই পড়ে। তার অর্জিত জ্ঞান, অর্জিত অভিজ্ঞতা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের জন্য লিখে যেতে পারে। এটা তার বড় গুণ।’ এরপর মুনির হাসান ‘মাদক এবং মিথ্যাকে না বলুন’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
এরপর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী। জাতীয় পর্বে তিন ক্যাটাগরিতে ১২ জন চ্যাম্পিয়ন, ১৭ জন প্রথম রানারআপ, ২৩ জন দ্বিতীয় রানারআপসহ ৫২ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের নিয়ে আগামী ১০ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর আয়োজন করা হচ্ছে নবম বিডিজেএসও জাতীয় ক্যাম্প। সেখানে থেকে আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জন্য ছয়জনের একটি দল ঘোষণা করা হবে। যারা ২০তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে।
এবারের নবম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি), বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। টাইটেল স্পনসর হিসেবে আছে আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলো এবং ম্যাসল্যাব। ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে আছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা।
জাতীয় পর্বের ফলাফল এবং অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বিডিজেএসওর ওয়েবসাইট www.bdjso.org এবং ফেসবুক পেজে www.facebook.com/bdjso। বিজ্ঞপ্তি