এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী
এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী

‘ভিন্ন রকমের’ ফলাফলেও পাসের হার কমেছে, তবে বেড়েছে জিপিএ-৫

এবার পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।

এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ–৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ–৫ বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়।

তবে সাংবাদিকেরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। তপন কুমার সরকার সব কটি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিরও সভাপতি।

ফলাফল দেখছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার ৯টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।

এবার পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ–৫ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ বললেন অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চমাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে।

জিপিএ–৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ–৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

যেভাবে হয়েছে বিষয় ম্যাপিং

বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এ জন্য কোনো পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ফল দেখছেন মুঠোফোনে। ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস, ১৫ অক্টোবর

যেমন এসএসসিতে যে পরীক্ষার্থী বিজ্ঞানে পড়েছিলেন, এইচএসসিতে হয়তো তিনি ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক শাখায় পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে এসএসসিতে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর প্রাপ্ত নম্বর পরীক্ষার্থীর এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিকের নৈর্বাচনিক বিষয়ের নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে; যদিও তা হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দিন বিভিন্ন এলাকার থানায় হামলা হয়েছিল। এতে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় ১১ আগস্টের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সচিবালয়ে আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।