রাজধানীর একটি কলেজের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ। ব্যবস্থা নিচ্ছে শিক্ষা বোর্ড।
চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) উত্তরপত্র নিজের কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে মূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর একটি কলেজের একজন শিক্ষকের (বোর্ড নির্ধারিত পরীক্ষক) বিরুদ্ধে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে এ জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত ন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক মো. আবু তাহের।
কারণ দর্শানোর নোটিশের পর শিক্ষককে কালোতালিকাভুক্ত করে আজীবনের জন্য বোর্ডের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, চেয়ারম্যান, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এই অভিযোগ পেয়ে এবং ভিডিও যাচাই করে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর কাছে থাকা উত্তরপত্রগুলো জব্দ করে অন্য শিক্ষককে দিয়ে পুনর্মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশের পর শিক্ষককে কালোতালিকাভুক্ত করে আজীবনের জন্য বোর্ডের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এ ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষকেও তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, নিয়মানুযায়ী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে তাঁরা বোর্ডে ডেকেছিলেন। সেখানে ওই শিক্ষক দাবি করেন, তিনি তাঁর কাছে কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থীদের দিয়ে শুধু বৃত্ত ভরাট করিয়েছিলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করাননি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক আবু তাহের এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি (আবশ্যিক) প্রথম পত্রের একজন পরীক্ষক ছিলেন। তিনি ৪৫০টি উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব পান। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর কাছে কোচিং করতে আসা রাজধানীর একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের একদল শিক্ষার্থীকে দিয়ে তিনি উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ন করান। এভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। উত্তরপত্রগুলো ঢাকার আরেকটি নামকরা কলেজের পরীক্ষার্থীদের বলে আলোচনা রয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা চলছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে তাঁরা বোর্ডে ডেকেছিলেন। সেখানে ওই শিক্ষক দাবি করেন, তিনি তাঁর কাছে কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থীদের দিয়ে শুধু বৃত্ত ভরাট করিয়েছিলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করাননি।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন একটি গোপনীয় বিষয়। উত্তরপত্র কোনোভাবেই অন্যকে দেখানোর সুযোগ নেই; কিন্তু এই শিক্ষক যা করেছেন, তা তিনি করতে পারেন না।
১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে অভিযুক্ত শিক্ষককে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা বোর্ড, তাতে বলা হয়, যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের লিখিত উত্তরপত্র দেখা গেছে। যে কোড নম্বর দেখা গেছে, সেটি শিক্ষক আবু তাহেরের। এই কাজ চরম দায়িত্বহীনতার ও পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে
বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য জানতে ওই শিক্ষকের মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। পরে আবার কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষক এমপিওভুক্ত নন। এর মানে, সরকার থেকে তিনি বেতন-ভাতা পান না। তাই তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষায় উত্তরপত্র মূল্যায়নে এর আগেও অনেক পরীক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। কখনো কখনো ‘অতিমূল্যায়নের’ যেমন অভিযোগ উঠেছে, আবার কখনো কম নম্বর দেওয়ারও অভিযোগ আছে। নম্বর যোগ–বিয়োগেও থাকে অসংগতি। এ জন্য প্রতিবছরই দেখা যায়, অনেক পরীক্ষার্থী প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে।
উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণে অনেকের ফলাফলেও পরিবর্তন হয়। যেমন এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে শুধু ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ১০৪ পরীক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬২ জন। যদিও বিদ্যমান নিয়মে ফলাফল প্রকাশের পর উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না, শুধু নম্বরের যোগ-বিয়োগে ভুলভ্রান্তি কিংবা গুরুতর কোনো অসংগতি থাকলে তা ঠিক করা হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক মিলিয়ে ৩৯ জনকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর এ সিদ্ধান্ত হয়। এই শিক্ষকেরা পাঁচ বছর পাবলিক পরীক্ষায় কোনো ধরনের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।