পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। তখন বলা হয়েছিল ‘ভিন্ন আঙ্গিকে’ মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে। তবে আজ বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেছেন, বৃত্তি নয়, অনুপ্রেরণামূলক আর্থিকসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হবে। আজ সচিবালয়ে সাক্ষরতা দিবস উদ্যাপনের তথ্য জানাতে আয়োজিত সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব।
কীভাবে এ অনুপ্রেরণামূলক সহায়তা দেওয়া হবে তারও কিছু ধারণা দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশুর মেধা বিকাশে কীভাবে উৎসাহ করা যায় সে জন্য কারিগরি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু প্রস্তাবনা এসেছে, যেমন খুদে অলিম্পিয়াড, দেশব্যাপী প্রতিযোগিতা। তবে কমিটিকে আরও এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সচিব।
একসময় বিদ্যালয়ের বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে হতো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। সেটি বাদ দিয়ে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা। এতে সব শিক্ষার্থীই বৃত্তি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারত। যদিও পিইসি পরীক্ষা নিয়ে ছিল সমালোচনা। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর ধরে পিইসি পরীক্ষা হয়নি।
এর মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষ (গত জানুয়ারি থেকে) থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও তা বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক বৃত্তির মতো পরীক্ষা নেওয়ার কথা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষার পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা বাদ দিয়েছে।
কিন্তু গত বছরের একেবারে শেষ বেলায় এসে আকস্মিকভাবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। বৃত্তি পরীক্ষাও নেওয়া হয় গত বছর। এরপর ওই বৃত্তি পরীক্ষার ফল নিয়েও ব্যাপক ভুলভ্রান্তির ঘটনা ঘটে। সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণ দেখিয়ে ফল স্থগিত করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য সংশোধন করে ফল প্রকাশ করা হয়।
এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এ বছরও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গত ১১ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণি পাঠ্যক্রমে আরও মনোযোগী করতে এবং শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এ পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।’ কিন্তু শেষমেশ বৃত্তি পরীক্ষা থেকে সরে এল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।