মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি। প্রস্তুতির জন্য সময় আছে আর ৪০ দিনের মতো। শিক্ষার্থীরা এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধৈর্য, সাধনা, কঠোর পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করবেন সাফল্যের মুকুট। সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অনেক সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন না। কীভাবে শেষের দিকে প্রস্তুতি নিতে হবে, ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য সে পরামর্শ নিয়মিত ছাপা শুরু প্রথম আলোর শিক্ষা পাতায়। শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও পরামর্শ নিয়ে আজ ছাপা হচ্ছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আফরা নাওয়ারের পরামর্শ।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ পরীক্ষার্থীর বিপরীতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০, তাই এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষা। সঠিক কৌশল অবলম্বন করে পড়াশোনা করা উচিত। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ১০০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। জীববিজ্ঞান-৩০, রসায়ন-২৫, পদার্থবিজ্ঞান-২০, ইংরেজি-১৫, সাধারণ জ্ঞান-১০। সময় এক ঘণ্টা। পরীক্ষার ধরন এমসিকিউ (multiple choice question)। যেহেতু আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল মেডিকেল, তাই আমি হলিক্রস কলেজে পড়া অবস্থায়ই মেডিকেলের প্রস্তুতি শুরু করি। যেহেতু জীববিজ্ঞান থেকে সিংহভাগ প্রশ্ন আসে, তাই বিষয়টির ওপর ভালো দক্ষতা থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে গাজী আজমল স্যার ও আবুল হাসান স্যারের বই দুটির প্রতিটি লাইন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আয়ত্ত করতে হবে।
রসায়নের ক্ষেত্রে সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী স্যারের বইটি মূলত পড়া উচিত। বড় ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন না পড়ে ছোট প্রশ্নগুলো পড়তে হবে। এই বইয়ের অনুশীলনী অংশের প্রশ্নগুলো চর্চা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমির হোসেন খান স্যারের বই থেকে সব রাশি, একক, মাত্রা, গুরুত্বপূর্ণ মান ইত্যাদি পড়তে হবে। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো আয়ত্ত করতে হবে। কারণ, এখান থেকে বিভিন্ন রাশির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন আসে।
প্রতিটি বইয়ের অনুশীলনী অংশের প্রশ্নগুলো বারবার পড়া উচিত। এসব বই ভালোভাবে পড়া শেষ হলেই কেবল অন্য কোনো বই পড়া যেতে পারে। রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান থেকে ছোট ছোট গণিত আসতে পারে, যেগুলো করতে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে হয় না।
ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি ভর্তি পরীক্ষার আগে শেষ দুই মাসে ভালোভাবে নেওয়া যায় না, তাই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি থেকেই এগুলো অল্প করে পড়া উচিত। ইংরেজির জন্য এইচএসসির সিলেবাসের সঙ্গে পড়তে হবে শব্দভান্ডার (vocabulary), প্রতিশব্দ, (synonym), বিপরীত শব্দ (antonym)। যেহেতু এগুলো যতই পড়া হোক কমন না–ই আসতে পারে, তাই অন্য টপিকগুলোয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, সাম্প্রতিক বিষয়াবলি। যদি আগে থেকে সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি না নেওয়া হয়, তাহলে এই অল্প সময়ে পড়ে শেষ করা যায় না। তাদের জন্য উপদেশ থাকবে শুধু গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো পড়া এবং অন্য বিষয়গুলোর প্রস্তুতি শাণিত করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অ্যাডমিশন টাইমে প্রচুর পরীক্ষা দেওয়া। অফলাইনে বা অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ করে দেয়। প্রতিদিন পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে টাইম ম্যানেজমেন্টে উন্নতি করা যায়।
যেহেতু ১০০টি প্রশ্নের উত্তর এক ঘণ্টায় দিতে হয়, তাই এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে হতাশ বা আনন্দিত না হয়ে ভুলগুলো শিখে ফেলতে হবে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং হয়ে থাকে, তাই এমসিকিউ প্রশ্ন ভুল উত্তর করার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ওই প্রশ্নের ১ নম্বরসহ নেগেটিভ মার্ক কাটা যাবে ০.২৫। অর্থাৎ একটি ভুল উত্তরের জন্য মোট ১.২৫ কাটা যাবে। তাই প্রথমে যেসব প্রশ্নের উত্তর সঠিক জানা আছে, সেগুলো আগে উত্তর করে ফেলা উচিত। একদমই না জানা প্রশ্ন উত্তর করা উচিত হবে না।
কারণ, নেগেটিভ মার্কিংয়ের জন্য মোট নম্বর অনেক কমে যেতে পারে।
শেষ মুহূর্তে ভালো প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজন মূল বইগুলো বারবার রিভিশন দেওয়া এবং প্রচুর অনুশীলনমূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। পরীক্ষা ভালো হোক এই প্রত্যাশা।
লেখক: আফরা নাওয়ার। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ছেন।