চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ স্নাতক এ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার সন্তান। কিন্তু ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশের আগেই ওই কর্মকর্তা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের সন্তানের ফলাফল জানিয়েছেন। প্রকাশের আগেই ওই কর্মকর্তা ফলাফল কীভাবে পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এ পোস্ট করেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলে আবীর চৌধুরী এ ইউনিটের সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১ হাজার ৬৯৬তম হয়েছেন। তিনি কোটায় তৃতীয় হয়েছেন। অবশ্য তিনি স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি সরিয়ে নিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল গতকাল রোববার এ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হতে পারে। তবে এক দিন আগে কীভাবে ফল জানলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফলাফলের বিষয়টি তাঁর ছেলে তাঁকে জানিয়েছেন। তিনি যাচাই-বাছাই না করে সেটি ফেসবুকে দিয়েছিলেন। তবে পরে ভুল বুঝতে পেরে পোস্টটি ডিলিট করেছেন।’ তাহলে ফেসবুকে উল্লেখ করা মেধাক্রম ভুল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাঁর ছেলের সহপাঠীদের মা-বাবার কেউ হয়তো ফলাফল প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত। যাঁরা ফলাফল প্রস্তুত করেছেন, তাঁদের থেকে হয়তো জেনেছেন। তাই এটি মিথ্যা না-ও হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনার সমন্বয়ক ছিলেন মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন মো. শফিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ। এ ফলাফলের কোনো ভিত্তি নেই।’
এ ইউনিটের ফলাফল চূড়ান্ত করে গতকাল বিকেলে আইসিটি সেলে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলে ফলাফল অধিকতর যাচাই-বাছাই হচ্ছে। জানতে চাইলে আইসিটি সেলের পরিচালক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি সেল থেকে ফলাফল জানার কোনো সুযোগ নেই। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হলেও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল তৈরির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মার্কশিট তৈরির দায়িত্বে আছেন। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করেন যে ইউনিটের পরীক্ষা হয়, সেই অনুষদভুক্ত বিভাগের সভাপতি ও অনুষদের ডিনরা।
তবে তাঁদের মধ্যে যদি কারও সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থী হন, তাহলে প্রশ্ন তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা থেকে শুরু করে ফলাফল প্রস্তুত করা—এসব প্রক্রিয়ায় তাঁকে রাখা হয় না। যেমন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ নাসিম হাসানের সন্তান এবার এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। তাই তাঁকে ভর্তিপ্রক্রিয়ার কোনো কিছুতে রাখা হয়নি। অথচ গত বছর তিনি এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অন্য বছরের মতো এ বছরও চারটি ইউনিট ও দুটি উপ-ইউনিটের মাধ্যমে হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত বুধ ও মঙ্গলবার দুই দিনের চারটি পালায় এ ইউনিটের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এ ইউনিট গঠন করা হয়েছিল বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের সব বিভাগ নিয়ে। এতে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ২১৫। এই ইউনিটে চার পালায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৪ হাজার ৭০৪ জন। তাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫৯ হাজার ৬০৯ জন। সেই হিসাবে উপস্থিতির হার ৭৯ দশমিক ৭৯।