আগামী বছর থেকে মাধ্যমিকের দশম শ্রেণিতেও শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। এ জন্য দশম শ্রেণির জন্য একেবারে নতুন ধরনের পাঠ্যবই প্রণয়ন করা হচ্ছে। পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণির জন্য একই বই ছিল; কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণির জন্য আলাদা বই হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রমতে, দশম শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যালোচনা করে সেগুলো ছাপার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। আর অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যবইয়েও প্রয়োজন অনুযায়ী সংযোজন–বিয়োজন হবে। মূলত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে তুলনামূলক বেশি সংযোজন–বিয়োজন হতে পারে। তবে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
এদিকে সপ্তম শ্রেণির একটি পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ শীর্ষক বহুল আলোচিত গল্পটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার পরিবর্তে নতুন আরেকটি গল্প যুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এনসিটিবিকে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনসিটিবির সূত্রগুলো বলছে, এ বছর যেহেতু শিক্ষাবর্ষের অর্ধেক চলে গেছে, তাই আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে নতুন গল্প যুক্ত করা হবে। আর চলতি বছর হয়তো বিদ্যমান গল্পটি পড়ানো হবে না।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ শীর্ষক হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে নতুন গল্প যুক্ত করা হবে। তবে গল্পটি পরিবর্তন করলেও ক্ষতি হবে না। শিখনফল অর্জনের বিষয় অক্ষুণ্ন থাকবে।অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব)
বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন এক শিক্ষক এক অনুষ্ঠানে ওই বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে গল্পটি পর্যালোচনা করার জন্য উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ সদস্যের ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুর রশীদ।
ওই কমিটি মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। বিভিন্ন ভুল উল্লেখ করে কমিটির পক্ষ থেকে গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
জানা গেছে, ৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনসিটিবির কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে আলোচিত গল্পটি বাদ দিয়ে সংশোধিত গল্প সংযোজন করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এই গল্পের পরিবর্তে অন্য গল্প সংযোজন করার জন্য জেন্ডার–বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মতামত নেওয়ারও পরামর্শ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে নতুন গল্প যুক্ত করা হবে। তবে গল্পটি পরিবর্তন করলেও ক্ষতি হবে না। শিখনফল অর্জনের বিষয় অক্ষুণ্ন থাকবে।