ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষার প্রশ্নে উঠে এল সাম্প্রতিক দুটি আলোচিত ঘটনা। সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যা ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে পরীক্ষায় প্রশ্ন করেছেন সমাজবিজ্ঞানের অবৈতনিক (অনারারি) অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।
গত সোমবার (৩ জুন) অনুষ্ঠিত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির প্রথম পর্বের ‘সামাজিক পরিবর্তনের তত্ত্ব: আধুনিকতা থেকে উত্তরাধুনিকতা’ কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন করেছেন অধ্যাপক মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ইংরেজিতে করা ওই প্রশ্নপত্রে দেখা যায়, প্রথম প্রশ্নে ‘হানি-ট্র্যাপে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য, ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে রক্তাক্ত হত্যা: পুলিশ’ শিরোনামে ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের খুন হওয়ার ঘটনাবিষয়ক একটি খবরের কিছু অংশ তুলে দিয়ে ঘটনাটিকে মার্ক্স, ফ্রয়েড, মার্কুস ও হার্ভের তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রশ্নে ‘বেনজীরের দুর্নীতি: সরকারের মনোভাব, দুদকের সক্রিয়তা কী বার্তা দেয়’ শিরোনামের আরেকটি খবরের কিছু অংশ তুলে দিয়ে মার্ক্স ও হার্ভের তত্ত্ব অনুযায়ী বাংলাদেশে পুঁজি আহরণের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ড ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির প্রসঙ্গটি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই দুই ঘটনা নিয়ে টানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
কেন সামাজিক পরিবর্তন হয়, তার অনেক তত্ত্ব আছে। যা কিছু ঘটছে, তা ওই তত্ত্বগুলো ব্যাখ্যা করে। ফলে প্রশ্নটা যে এ রকম হবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। এবারই যে প্রথম এমন প্রশ্ন করেছি, তা নয়অধ্যাপক মাহবুব উদ্দিন আহমেদ
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের পরীক্ষায় সমসাময়িক সামাজিক পরিবর্তন ও আলোচিত ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। তাঁর ক্লাসও খুবই উপভোগ্য। শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল করে তোলার একটি প্রচেষ্টা তাঁর সব সময়ই ছিল এবং আছে। সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব-পদ্ধতির আলোকে বর্তমান সময় ও সমাজকে ব্যাখ্যা করতে শেখান এই শিক্ষক।
যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক মাহবুব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কেন সামাজিক পরিবর্তন হয়, তার অনেক তত্ত্ব আছে। যা কিছু ঘটছে, তা ওই তত্ত্বগুলো ব্যাখ্যা করে। ফলে প্রশ্নটা যে এ রকম হবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। আমি এবারই যে প্রথম এমন প্রশ্ন করেছি, তা নয়। গত ২০ বছর ধরেই এমন প্রশ্ন করি। পি কে হালদার, পরীমণির ওপরও আমি এ রকম প্রশ্ন করেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগে বছর বছর একই ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি বললেন, ‘এগুলো হওয়া উচিত নয়। এখানে শিক্ষকেরা থাকবেন, ক্রীতদাসেরা থাকবে না। সেটা করতে গেলে জীবন ও সমাজে যা ঘটছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে এবং বুঝতেও হবে। যিনি চিকিৎসক, তাকে দেশের লোকের রোগগুলো সম্পর্কে তাঁকে জানতে হয়। অন্যরা পড়বে না; ৫০ বছর আগে যা পড়েছে, সেটাই সব সময় পড়ে যাবে, সেখান থেকেই প্রশ্ন করবে, খাতা না দেখেও নম্বর দেবে, এগুলো তো হতে পারে না। আই ফিল গুড যে আই ক্যান বি কন্টেম্পোরারি।’