এ বছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা হবে ২৯ ডিসেম্বর। এ জন্য পঞ্চম শ্রেণির চলমান বার্ষিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) ১৯ ডিসেম্বর শেষ করে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরপত্র দেখার কাজ নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আর পঞ্চম শ্রেণির মূল্যায়নের ফলাফল প্রকাশ করতে হবে ২১ ডিসেম্বর। এ জন্য পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রতিদিন মূল্যায়ন করতে হবে।
বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে হবে এ বৃত্তি পরীক্ষা। প্রতিটি বিষয়ে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এক দিনেই দুই ঘণ্টায় হবে এ পরীক্ষা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সব উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। তার আগে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণসহ অন্যান্য কাজ করতে হবে।
জানা গেছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির বাছাই করা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। বাকিরা এ সুযোগ পাবে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হবে।
বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হবে।
যদিও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাপত্রে কীভাবে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হবে, সেটি উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষকেরা বিভ্রান্তিতে আছেন। ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ভেবেছেন, বছরের আগের পরীক্ষাগুলো বা অন্যান্য কার্যক্রমের ভিত্তিতে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হবে। কিন্তু নতুন নির্দেশনাপত্রেও বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি।
এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে হবে এ বৃত্তি পরীক্ষা। প্রতিটি বিষয়ে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এক দিনেই দুই ঘণ্টায় হবে এ পরীক্ষা।
গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় আকস্মিকভাবে এ বছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়; যদিও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বছরের শেষে এসে হঠাৎ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া একদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন ক্ষতিকর বিষয় হবে, তেমনি নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসবে, তার জন্যও নেতিবাচক হবে।
এখন প্রতিদিন বার্ষিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাড়াহুড়া করে সঠিক মূল্যায়ন কতটা হবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। আবার বৃত্তি পরীক্ষাও হবে ৪ বিষয় মিলিয়ে মাত্র ১০০ নম্বরের। সব মিলিয়ে ‘যেনতেন’ প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই বৃত্তি পরীক্ষা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, সাধারণত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে থাকে বহু আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে।
একসময় বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে হতো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। সেটি বাদ দিয়ে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা। এতে সব শিক্ষার্থীই বৃত্তি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারত; যদিও পিইসি পরীক্ষা নিয়ে ছিল সমালোচনা। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ও নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর ধরে পিইসি পরীক্ষা হচ্ছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও তা বাস্তবায়ন করা হবে, যেখানে প্রথাগত পরীক্ষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বছরের একেবারে শেষবেলায় এসে আকস্মিকভাবেই এ বছর সেই পুরোনো ব্যবস্থার মতো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। তার আগে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণসহ অন্যান্য কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী শিক্ষায় পরিবর্তনের যে ধারা তৈরি হচ্ছে, সেখানে হঠাৎ সামষ্টিক পরীক্ষা নেওয়ার প্রচেষ্টা কখনোই ইতিবাচক চর্চা হতে পারে না, বরং ক্ষতির কারণ হতে পারে। শিক্ষার্থীর একাডেমিক ও মানসিক বিকাশের দৃষ্টিকোণ থেকেও যদি দেখা হয়, তাহলেও এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের ওপর নানামুখী মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করে যদি এ ধরনের একটি বৃত্তি কার্যক্রম আবার চালু করা হয়, তাহলে এটি বৈষম্যমূলক হবে। তাই এটি নিয়ে আরেকটু ভাবার অবকাশ রয়েছে।