এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রুটিন গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রকাশ করেছে আন্তশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি। পাহাড়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসবের দিনে এসএসসির একটি পরীক্ষা পড়েছে। তাই এই রুটিনের তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। এ জন্য তারা শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এ ছাড়া এই উৎসবের সময় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ (পাঁচ) দিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবিও স্মারকলিপিতে জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপদেষ্টা বরাবরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এ স্মারকলিপি দেয়। এ সময় পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমাসহ ১০ থেকে ১৫ জন কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নিপন ত্রিপুরা ও রুমেন চাকমা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিনে ১৩ ও ১৫ এপ্রিল ২০২৫–এ যথাক্রমে বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক দিন সরকারি ছুটি আছে। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিন প্রণয়নের সময় ছুটি হিসেবে বাংলা নববর্ষকে বিবেচনা করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, বিষু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবগুলো ছুটির আওতায় আনা হয়নি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসবটির উদ্দেশ্য ও চেতনা এক ও অভিন্ন। বর্ষবিদায়, বরণসহ এ উৎসবের দিনে পরিবারের লোকজন সবাই একত্র হয়ে থাকে এবং সামাজিকভাবে একত্র হয়ে পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে নানা ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এ ছাড়া বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের মধ্যে এ উৎসবের ঐতিহ্যগত ও আর্থসামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। স্মরণাতীত কাল থেকে উদ্যাপিত হয়ে আসা এ উৎসবটি জুম্ম জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অংশ, যা তাদের পারস্পরিক ঐকতান ও ভ্রাতৃত্ববোধকে একইসূত্রে গেঁথে আবহমানকাল ধরে বহমান রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল (বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে) পর্যন্ত এ উৎসবগুলো পালিত হয়ে থাকে।
এ উৎসব পালনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১২ ও ১৫ এপ্রিল সরকারি ছুটির ঘোষণা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ছুটির নির্দেশনা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। ফলে উৎসবের দিনগুলোয়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষা থাকায় জুম্ম শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রধানতম সামাজিক উৎসবটি পালন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম শিক্ষার্থীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের প্রধানতম সামাজিক উৎসব পালন করতে পারে, সে জন্য অনতিবিলম্বে ১৩ ও ১৫ এপ্রিল পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনপূর্বক এসএসসি পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশ করা ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ (পাঁচ) দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দাবি জানানো হয়।