এইচএসসিতে গতবারের চেয়ে প্রায় ২ লাখ পরীক্ষার্থী কমেছে

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
ছবি: প্রথম আলো

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ লাখ কমেছে। আজ বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

সংবাদ সম্মেলনের আগে এই পরীক্ষা নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার্থীর তথ্য জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে  ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭, যা গত বছর ছিল প্রায় ১৪ লাখ। গতবারের চেয়ে এবার ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮৩ জন পরীক্ষার্থী কমেছে।

গতবার পাসের হার বেশি হওয়ায় এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী অনেক কমেছে। আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমার কারণেই মূলত এ বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।  এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১। গতবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা ৫৩ হাজারের কিছু বেশি। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় এ বছরের মোট পরীক্ষার্থী কমেছে।

সুষ্ঠু পরীক্ষার জন্য যেসব সিদ্ধান্ত
সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে দেরিতে প্রবেশ করতে দিলে সেই পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্বের কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্ট্রারে লিখে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। আর কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে।

কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কেন্দ্রসচিব) ছাড়া অন্য কেউ মুঠোফোন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও ছবি তোলা যায় না, এমন একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা  প্রশ্ন রেখে বলেন, একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে থানায় রাখা কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর দিনের আগেই বের করে আনা হয়। এর ফলে ওই বোর্ডের  ওই সব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে নতুন তারিখে নেওয়া হয়। সুতরাং এবার এমন কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যে এমন ঘটনা ঘটবে না? জবাবে দীপু মনি বলেন, ওই ঘটনার তথ্যের ভিত্তিতেই এবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে কোথায় ব্যত্যয় ছিল, আর যেন কোনো ব্যত্যয় না থাকে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য সিদ্ধান্তগুলো কী, তা আর উল্লেখ করেননি শিক্ষামন্ত্রী।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবমুক্ত ও নকলমুক্ত পরিবেশে সুন্দরভাবে নেওয়ার লক্ষ্যে ৩ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ  রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

এবারও নম্বর ও সময় কম
এবারও পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ২৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হবে। সময় ২০ মিনিট। লিখিত বা তত্ত্বীয় পরীক্ষার অংশে ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউর ৩০টির মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হবে। সময় ২০ মিনিট। তত্ত্বীয় পরীক্ষার অংশে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৪টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি হলেও আগামী বছর পূর্ণ সময়ে ও সব বিষয়ে পরীক্ষা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।