এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পাসের হারে দেখা যাচ্ছে মেয়েরা এগিয়ে। এর জন্য ধন্যবাদ। জিপিএ-৫–এর দিক থেকেও তারা এগিয়ে। ছেলেরা মেয়েদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবারই দেখি মেয়েদের পাসের হার বেড়ে যাচ্ছে। এখন ছেলেদের পিছিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’
আজ রোববার রাজধানীর গণভবনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবার মেয়েদের পক্ষে বলে ফেলছি, ছেলেরা মন খারাপ করো না। ছেলেদের বলতে চাই, তোমরা পিছিয়ে থেকো না, সমানতালে তোমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।’
বেলা ১১টার কিছু আগে কম্পিউটারের বোতাম চেপে আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি বছরের (২০২৩) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন ছেলে এবং ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন মেয়ে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে দক্ষ জনশক্তি আমাদের গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশে-বিদেশে যেখানে কাজ করুক না কেন, মাতৃভাষার সঙ্গে তাদের একটি বা দুটি অন্য ভাষা শিখানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তাতে সারা বিশ্বে আমাদের কর্মসংস্থানের আরো সুযোগ হবে। আজকাল ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজস্ব ইউনিয়নে বসে অনেকেই বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।
তিনি বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। সেজন্য তাদের শিক্ষাটাও প্রযুক্তি নির্ভর এবং বহুমুখীকরণ করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা একটা উন্নত জীবন পাক।সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হোক এবং সুন্দরভাবে তারা বেড়ে উঠুক। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি তারই সৈনিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলুক’।
বিএনপি’র অবরোধ-হরতাল এবং জ্বালাও–পোড়াওয়ের মধ্যেও নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডগুলোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এবারের পরীক্ষার ফলে মেয়েরা এগিয়ে থাকায় প্রধানমন্ত্রী তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ছেলেরাও পিছিয়ে থাকবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃতকার্যদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের পাঠে আরা মনোনিবেশ করার মাধ্যমে আগামীতে ভাল ফল করার আহ্বান জানান এবং তাদের এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তিরস্কার না করে বরং সমব্যাথী হিসেবে পাশে থেকে প্রেরণা যোগানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
গণভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফলাফল প্রকাশ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে গণভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা।
পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফলাফল পাচ্ছেন। এরপর বেলা দুইটায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
গত ১৭ আগস্ট শুরু হয়েছিল এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চট্টগ্রাম এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা কিছুদিন পর শুরু হয়েছিল। এবার পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী, একটি ছাড়া সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছে। শুধু তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) পরীক্ষা শেষ সময়ে এসে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বা মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে পারছেন। মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে HSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
উদাহরণ : HSC DHA 123456 2023 লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে পরীক্ষার ফলাফল।
এ ছাড়া ওয়েবসাইটে রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে Result sheet download করা যাচ্ছে।
এ ছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে Result কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন এন্ট্রি করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক Result sheet download করা যাবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল ডাউনলোড করে প্রকাশ করার জন্য ওয়েবসাইটের Result কর্নারে ক্লিক করে প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএনের মাধ্যমে ফলাফল ডাউনলোড করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।