মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি। প্রস্তুতির জন্য সময় আছে খুবই কম। শিক্ষার্থীরা এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধৈর্য, সাধনা, কঠোর পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করবেন সাফল্যের মুকুট। সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অনেক সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন না। কীভাবে শেষের দিকে প্রস্তুতি নিতে হবে, ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য সে পরামর্শ নিয়মিত ছাপা শুরু প্রথম আলোর শিক্ষা পাতায়। শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও পরামর্শ নিয়ে আজ ছাপা হচ্ছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইত্তেফা জাহানের পরামর্শ।
আর কয়েক দিন পরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। ছোটবেলায় রচনায় লেখা ‘আমার জীবনের লক্ষ্যের’ খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন সবাই। তাই এ মুহূর্তে প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই খুব জোরেশোরে চলছে। সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে কীভাবে সাদা অ্যাপ্রোনের দুনিয়ায় জায়গা করে নিতে পারেন, সে সম্পর্কেই কিছু কথা বলব আজ।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। বইয়ের কোনো টপিক বাদ দিয়ে বা বেছে পড়ে চান্স পাওয়ার সুযোগ এখানে নেই। আপনাকে প্রতিটা বাক্য পড়ে দেখতে হবে। যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। বই দাগিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলে ভালো হয়। প্রতিটা বিষয়ের জন্য একটা করে মূল বই পড়তে হবে। সঙ্গে দু–তিনটা সহায়ক বই রাখবেন। মূল বই থেকে কোনো অধ্যায় পড়ার পর সহায়ক বই থেকে সেই অধ্যায়টা একবার রিডিং দেবেন, কোনো নতুন তথ্য থাকলে সেটা মূল বইয়ে লিখে নেবেন। এতে সময় বাঁচবে। প্রতিটা অধ্যায়ের শেষে অনুশীলনীর প্রশ্নগুলো দেখে যাবেন। সব সময় সাম্প্রতিক এডিশনের বই পড়বেন।
উত্তরের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, এমন কোনো প্রশ্নব্যাংক নিয়ে বিগত বছরগুলোর মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বারবার অনুশীলন করবেন। এর মধ্য থেকেই ৬০-৭০ শতাংশ কমন পড়ার সম্ভাবনা থাকে। পদার্থের প্রতিটা অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একক ও মাত্রা সমীকরণ একটা পেজে লিখে রাখুন। যখনই সুযোগ পাবেন, একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন। একই কাজ করবেন রসায়নের ক্ষেত্রেও। পদার্থের ম্যাথ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই, মুখে মুখে করতে পারেন, এমন ম্যাথই আসবে।
জীববিজ্ঞান আপনাদের জন্য একটা গেমচেঞ্জার সাবজেক্ট। ভালো প্রস্তুতি থাকলে ২৭-২৮টা সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব। সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির জন্য যেকোনো একটা বই অনুসরণ করবেন। সঙ্গে বিগত বছরের প্রশ্ন ও বিসিএসের প্রশ্ন দেখে যাবেন। এ বছরের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখবেন। প্রতি মাসের চলতি ঘটনাগুলোয় একবার চোখ বোলাতে পারেন।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবেও প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১২+ ঘণ্টা পড়াশোনা করবেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম ও খাওয়াদাওয়া করবেন। প্রতিদিন নিজের জন্য ১৫ মিনিট সময় রাখবেন। এ সময় একটু হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করলেন, একটা প্রিয় গান শুনলেন বা পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। এতে নির্ভার থাকা যায়। এ সময় ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে একদম দূরে থাকবেন।
নিয়মিত মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করবেন
পরীক্ষার আগে একটা রুটিন করে নেওয়া ভালো। নিয়মিত মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করবেন। পরীক্ষার আগের সপ্তাহে প্রতিটা বই অন্তত দুবার শেষ করবেন। এ সময় নতুন কিছু পড়বেন না। আগে যা পড়েছেন, তাই বারবার রিভিশন দেবেন।
পরীক্ষার আগের দিন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা বইয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন, প্রশ্নব্যাংক থেকে গত ১০ বছরের প্রশ্ন দেখে নেবেন। এদিন বন্ধুদের সঙ্গে ফোন দিয়ে কে কেমন প্রিপারেশন নিলেন, এসব আলোচনা করার কোনো দরকার নেই। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখবেন। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবেন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, কোনো রকম গুজবে কান দেবেন না। প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে এখনকার প্রশাসন খুবই কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে, কাজেই এ রকম কিছু শুনলেও এড়িয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, অসদুপায় অবলম্বন করে কখনো ভালো কিছু পাওয়া যায় না।
পরীক্ষার দিনে করণীয়
পরীক্ষার দিন সকালে গ্লুকোজ বা মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে যাবেন। একগাদা বই নিয়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার দরকার নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন, দূরত্ব ও যানজটের ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। কেন্দ্রে আপনার রুম ও সিট খুঁজে দিতে স্বেচ্ছাসেবকেরা সাহায্য করবেন। ঠিকমতো রোল ও রেজিস্ট্রেশনের ঘর পূরণ করবেন। প্রশ্ন পেয়ে প্রথম আধা ঘণ্টায় যেগুলো কমন, সেগুলো দাগিয়ে নেবেন, তারপর বাকিগুলো। চেষ্টা করবেন ৯৫+ দাগাতে, যত বেশি দাগাবেন, চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। একদম নিশ্চিত না হয়ে ডাবল অ্যান্সার বা ব্ল্যাংক রাখবেন না। আর প্রশ্নের নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে উত্তর দাগাবেন। যদি কোনোভাবে ভুল হয়েও যায়, না ঘাবড়ে ঠান্ডা মাথায় বাকিগুলো দাগাবেন। মনে রাখবেন, আপনার এত দিনের পরিশ্রমের ফল এই এক ঘণ্টার ওপর নির্ভর করছে। নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কমন প্রশ্নে ভুল করা যাবে না। মনে রাখবেন, সহজ প্রশ্নগুলো আপনাকে চান্স পাইয়ে দেবে আর কঠিন প্রশ্নগুলো আপনাকে সিরিয়ালে এগিয়ে দেবে।
মেডিকেলে চান্স পাওয়ার জন্য পড়াশোনার কোনোই বিকল্প নেই। পরিশ্রম করুন, আত্মবিশ্বাস রাখুন। অধরা সাদা অ্যাপ্রোনের সঙ্গে স্টেথোস্কোপ আপনার গলাতেই শোভা পাবে।
*লেখক: ইত্তেফা জাহান, সেশন: ২০১৭-১৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা