করোনা পরিস্থিতিতে আবাসিক হল খোলার জন্য ‘জাতীয় সিদ্ধান্ত’ লাগবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। উপাচার্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এ বিষয়ে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হলে বড় আকারের ঝুঁকি তৈরি হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে যে বাংলাদেশের জাতীয় সিদ্ধান্ত একরকম আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরো জাতিকে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
পরীক্ষা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। সেখানে উপাচার্য এসব কথা বলেন।
ছাত্রলীগের দুই নেতার উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবে তোমরা যে প্রস্তাবটি করেছ, আমি তার বিপক্ষে নই। এটি স্বাভাবিক বন্ধের সময় নয়। এই বন্ধ সেই বন্ধ নয়। এটি হলো মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ, সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য বন্ধ। এখানে মামলার বিধানও আছে। এখানে যদি আজ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে বড় আকারের ঝুঁকি তৈরি হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে যে জাতীয় সিদ্ধান্ত একরকম আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরো জাতিকে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন কেউ বলবে যে ট্রাম্পের মতো আচরণ হচ্ছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই...। নইলে তোমাদের মতের সঙ্গে আমি দ্বিমত নই।’
আখতারুজ্জামান বলেন, পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে যে অন্তত একটি পরীক্ষা হলেও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। তখন আমরা বললাম, ঠিক আছে এটা আমরা করব।
হল খোলার ব্যাপারে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এ ব্যাপারে জাতীয় সিদ্ধান্ত লাগবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত লাগবে, আমরা সেগুলো নিচ্ছি। সবশেষ ইউজিসি থেকে গতকাল বুধবার একটি চিঠি পেলাম। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রাখতে হবে। পরীক্ষা নেওয়া যাবে, তবে পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা আসবে ও শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্নভাবে ক্যাম্পাস থেকে চলে যাবে। জাতীয় এই চিন্তার ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা কোনো কাজ করতে গেলে, তা খুবই মানবিক ও জরুরি হলেও, যে ঝুঁকি তৈরি হবে, সেটিই বিবেচ্য বিষয়।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা যে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটি মূলত ভিন্নভাবে, বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বলা ছিল যে বিভাগ-ইনস্টিটিউটগুলো নিজেদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাতে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। কারণ, শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। এর মধ্যেই পিএসসির বিসিএসের বিজ্ঞাপন চলে এল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এটি আমাকেও তো ব্যথিত করে যে আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে কি না। আমার নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব হলো আমার ছেলেমেয়েদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও তাদের প্রমোট করা। দেখলাম, আমাদের ছেলেমেয়েরা আটকে আছে, চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না, জীবনের সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অভিভাবকেরা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। অন্যদিকে অন্যরা স্নাতক শেষ হওয়ার পর বের করে দিচ্ছে। অন্যদের চেয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়বে, এর চেয়ে ব্যথা, দুঃখ শিক্ষক ও উপাচার্য হিসেবে থাকার কথা না? তথ্যগুলো যখন একাডেমিক কাউন্সিলে সবিস্তারে আলোচনার সময় বলা হলো পরীক্ষাগুলো নেওয়া উচিত, সেখান থেকেই কম সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি উঠে এল। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হলো যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্নাতক-স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো আমরা নেব। তার মধ্যে আবার অগ্রাধিকার পাবে তারা, যাদের দু-তিনটি পরীক্ষা বাকি আছে। পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে যে অন্তত একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তখন আমরা বললাম, ঠিক আছে এটা আমরা করব।’
এই সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে, তবে তার আগে আবাসিক হল খুলে দিতে হবে। উপাচার্য আমাদের বলেছেন, একাডেমিক কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয় যে ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা হবে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে হলগুলো বন্ধই থাকছে। শুরু থেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে সব ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। হল খোলার দাবিতে ছাত্রলীগ ১২ ডিসেম্বর বিবৃতি ও ১৩ ডিসেম্বর উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে। পরীক্ষা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও।